আপনার ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকুন

ঝালকাঠির নেছারাবাদ দরবার শরিফের বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিলের শেষ দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত নেছারাবাদ দরবার কমপ্লেক্সের মাহফিল মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ঐক্য–সম্প্রীতির লক্ষ্যে মুজাদ্দেদে জামান হজরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত নেছারাবাদে এই প্রথমবারের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীন-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনকে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আমিরুল মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী মাওলানা খলিলুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক সৈয়দ আবুল হোসেন, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবুল বাছিত আজাদ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আকতার হোসেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি। এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আমরা। আমাদের পাড়া-মহল্লায় কুরআন ও দ্বীনের চর্চাই আমাদের নেয়ামতের উৎস। আল্লাহ এই পথকে মনোনীত করেছেন—এটাই কল্যাণের পথ।
তিনি বলেন, সমস্ত মুসলিম উম্মাহর প্রতীক একটাই, পবিত্র আল-কুরআন। কুরআনের বিপরীতে যা আসবে, আমরা তা কখনো গ্রহণ করব না। কুরআনের হুকুম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই দেশ-সমাজ ও বিশ্বজুড়ে অশান্তি ও রাহাজানি ছড়িয়ে পড়েছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শফিকুর রহমান বলেন, প্রার্থী বিবেচনা করে ভোট দিন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। দেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়— জাতি পিপাসিত। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র বা আগের মতো কোনো অনিয়ম হলে জনগণই বুলেট হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আপনার ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকুন। আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ— পুরোনো সব ভুলে জাতিকে এগিয়ে যেতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো এক হলে এবং একটি ভোটের বাক্স রক্ষা করতে পারলে দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। ৫ আগস্টের পরে আমাদের সামনে এসেছে সুবর্ণ সুযোগ। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মনোবল নিয়ে দেশকে ফের গড়তে হবে।
তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসা ইমানের অংশ। কোনো বিদেশি তাঁবেদারি আমরা মেনে নেব না। বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের জায়গা নেই। দেশের মাটিতে বসে কোনো বিদেশির গোলামি চলবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, মূলনীতি ও জাতীয় স্বার্থে আমাদের এক হতে হবে। বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে যাতে না পারে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের ঐক্য এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি ন্যায়বিচার বজায় থাকলে কেউ বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। একদল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিদেশের কাছে বিক্রি করেছে। আসন্ন গণভোটে আপনারা ‘হ্যাঁ’ ভোট দিন— ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের পথ বন্ধ করে দিন।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ তার বক্তব্যে পলাশীর প্রান্তর, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাস এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন অধ্যায় স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ভারতের আগ্রাসন এবং এদেশে যারা ভারতের দালালি করছে— তাদের বিষয়ে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশের মাটি কারও কাছে বিক্রি হবে না। যারা বিদেশি স্বার্থে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া হবে না।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে নেছারাবাদ দরবার শরীফে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের এক মঞ্চে বসানোর এই উদ্যোগকে স্থানীয় বিশ্লেষকরা ‘গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।
আয়োজকরা জানান, আগামীকাল ২৩ নভেম্বর ফজরের পর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের মাহফিলের সব কার্যক্রম শেষ হবে।
শাহিন আলম/আরএআর