ঠাকুরগাঁওয়ে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলা, আহত ২

ঠাকুরগাঁওয়ে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় দুইজন বাউল শিল্পী আহত হয়েছেন। তবে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ‘সম্প্রীতির ঐক্য, ঠাকুরগাঁও’ ব্যানারে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে বাউল শিল্পীদের প্রতিবাদ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন ছিল। কিন্তু সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে কোর্ট চত্বর এলাকায় দুইজন বাউল শিল্পীকে একা পেয়ে উৎসুক জনতা তাদের ওপর হামলা করে। পরে কয়েকজন বৃদ্ধ বাউল শিল্পী প্রাণ বাঁচাতে জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনসহ আদালত প্রাঙ্গণের বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নিতে গেলে উৎসুক জনতা সেখানেও ঢুকে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় একজনকে দোকান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে মারধর করে চলে যায়।
হুমায়ুন, রুবেল রানা এবং নাজমুল হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালতে কেন বারবার মানুষ হামলা ও মারধরের শিকার হবে? এ প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রকে দিতেই হবে। আদালত এমন জায়গা, যেখানে মানুষ বিচার চাইতে আসে, হামলার শিকার হতে নয়। পরিস্থিতি এমন থাকলে সাধারণ মানুষ আদালতে আসতেও ভয় পাবে। আদালতের মতো নিরাপত্তা-নির্ভর স্থানে যদি কেউ এসে নির্বিঘ্নে মানুষকে মারধর করে চলে যেতে পারে, তাহলে এটি কেমন আইনশৃঙ্খলা?
তারা আরও বলেন, আদালত চত্বরে মানুষ নিরাপদ না থাকলে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা কোথায় দাঁড়াবে? এ ধরনের বর্বরতা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পায়, তবে আদালত জনগণের ন্যায়ের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে তার মর্যাদা হারাবে। আদালতে হামলা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত, এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি।
অন্যদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে জেলা বিএনপির নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি এ নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, বাউলদের ওপর হামলা ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারক-বাহক বাউলরা মাঠে-ঘাটে গান গেয়ে বেড়ান। তাদের ওপর হামলা মূলত উগ্র ধর্মীয় মনোভাবের প্রকাশ- এটি একেবারেই ঠিক নয়। এ ধরনের হিংসা-প্রতিহিংসা কারো জন্যই শোভন নয়। আমরা অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু বলেন, বাউল শিল্পীরা তাদের কর্মসূচি পালনের জন্য কোর্ট চত্বরে জড়ো হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ মিছিল নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা ও মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে বাউল শিল্পীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। উদীচীর পক্ষ থেকে আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার আলম খান বলেন, বাউল শিল্পীদের বলা হয়েছে- অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেদওয়ান মিলন/এআরবি