ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ওসির অপসারণ দাবি জামায়াত প্রার্থীর

পাবনার ঈশ্বরদীতে পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের দফায় দফায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল।
তিনি বলেন, ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুর নূর একটি দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন। আমি তার অপসারণ দাবি করছি। জামায়াত-শিবিরের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলার আহতের পর এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও ওসি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠায়নি। পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের এতো নেতাকর্মী আহত হতো না এবং ১৫-২০ মোটরসাইকেল সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিতে পারতো না।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাতে পৌর শহরের ভেলুপাড়া এলাকায় নির্বাচনী অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপির হামলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঈশ্বরদী থানার ওসির নিকট ফোন করেছি। এরপর আরও কয়েকবার ফোন দিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন লোক পাঠাচ্ছি। কিন্তু ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। পরবর্তীতে আমাদের লোকজন পাবনার এসপি, ঈশ্বরদী সার্কেলের এডিশনাল এসপিকে জানিয়েছেন এবং পাবনা-৫ আসনের জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন আর্মিকে (সেনাবাহিনী) জানিয়েছেন কিন্তু আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। পরিতাপের বিষয় ঈশ্বরদীর ওসি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দলের মারামারি হয়েছে, জামায়াতের চারজন, বিএনপির তিনজন আহত হয়েছেন। তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়েছে। আমি ওসির এ ধরনের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাই। একজন ওসি হিসেবে সরকারি চেয়ারে বসে এ ধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক কথাবার্তা বলেছেন। তিনি সত্য উদঘাটন না করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আমি পরিষ্কার বলছি, আমাদের ১৫-২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। ৫০ জনের ওপরে নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ওসিকে ফোন দিয়েছি তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে পারেনি। এটি খুব দুঃখজনক। আমার তো মনে হচ্ছে তিনি একটি দলের মুখপাত্র হিসেবে এই বয়ান দিয়েছেন। আমি ওসির অপসারণ দাবি জানাচ্ছি। তিনি মূলত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।
আবু তালেব মন্ডল আরও বলেন, ২৭ নভেম্বর বিকালে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে প্রচারণা জন্য আমরা সাহাপুর ইউনিয়নের মোড়ে দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথে পাবনার-৪ আসনের বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং আমার গাড়ি ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণ করে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল এতে আমি আহত হয়েছি। আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসা হাবিবুর রহমান হাবিব বিএনপির লেবাসধারী। আওয়ামী লীগের চরিত্র তার মধ্যে এখনো দেখা যায়।
ইতোমধ্যেই হাবিবুর রহমান হাবিব বিএনপি সভা সমাবেশে বলেছেন, বিএনপির বিপক্ষে কেউ কথা বললে তার জিব্বাহ কেটে কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হবে।
এছাড়া তিনি আরও বলেছেন, দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে কেউ সুষ্ঠু বাড়ি ফিরতে পারবেন তো? তার মতো একজন রাজনীতিবিদের নিকট থেকে মানুষ ধরনের বক্তব্য আশা করে না। আমি বর্তমান সরকারের কাছে আহ্বার জানাই এ ধরনের সন্ত্রাসী কায়দায় কথা বলার কারণে তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার।
হাবিবুর রহমানের বিভিন্ন সময় এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সমর্থক মক্কেল মৃধা তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ হামলায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ চারজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৫-২০টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরও ২০-৩০টি মোটর সাইকেল বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিনিয়ে নিয়েছে।
তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি জানিয়েছেন, তিনি এ ব্যাপারে জানেন না এবং তার কোনো দায় নেই।
তার দাবি, জামায়াতের নেতাকর্মীরাই তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন। পরে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে এক অডিও বার্তায় তিনি এসব মন্তব্য ও দাবি করেন।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুন নূরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রনব কুমার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। এখনো উভয়পক্ষ লিখিত এজহার দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাকিব হাসনাত/আরকে