মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অমান্য করে ব্যাকডেটে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা!

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে ব্যাকডেটে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) এডহক কমিটি গঠনের জন্য নথি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আমিনুল হক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবরের শেষের দিকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল ঘোষণার পর মাইকিং, মনোনয়নপত্র বিক্রি ও নির্বাচন প্রস্তুতিও শুরু হয়। ঠিক সেই সময় ১৫ নভেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনের সব কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনাটি ১৬ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, হাইকোর্টে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের কারণে ‘গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রবিধানমালা ২০২৪’ সম্পর্কিত ৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্র তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। এ সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেখানে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এই স্পষ্ট বিধি-বিধান উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন নিয়মিত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থামিয়ে ব্যাকডেট দেখিয়ে নতুন নথি শিক্ষাবোর্ডে পাঠানোর উদ্যোগ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্বের ম্যানেজিং কমিটি অবৈধভাবে পরিপত্র উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের ছয় নম্বর জুনিয়র সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করে। সে সময় দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে চারজন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে একটি পত্রে স্বাক্ষর দিতে বলা হয়। তারা অস্বীকৃতি জানালে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক অনিল চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বাকি তিনজন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে অনাপত্তি দেখানো হয়েছে।
ঘটনা প্রকাশ্যে এলে চারজন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক স্বাক্ষর জালের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এর পরেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জুনিয়র সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় দুই দশক ধরে বিদ্যালয়টিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিটি গঠন ও প্রশাসনিক অনিয়ম চলে আসছে। তারা মনে করছেন, মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশ চলমান থাকা অবস্থায় তফসিল ঘোষণা, মাইকিং, মনোনয়নপত্র বিক্রি এবং ব্যাকডেটে এডহক কমিটি প্রস্তাব পাঠানো সম্পূর্ণ অবৈধ এবং উদ্দেশ্যমূলক।
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের সার্বিক অনিয়ম তদন্ত করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।
বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক রেজাউল করিম রেজা বলেন, সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে ২০ বছর থেকে গোপনে পকেট কমিটি গঠন হয়ে আসছে। নিয়মিত কমিটি গঠনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। সরকারি আদেশে তা স্থগিত হলে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে আবারও এডহক কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করতেছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আমিনুল হক বলেন, পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের একটি প্রস্তাব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। তবে এটি ব্যাকডেট দেখিয়ে পাঠানো হোক কিংবা সাম্প্রতিক তারিখে পাঠানো হোক, বর্তমান স্থগিতাদেশের সময় কোনো প্রকার কমিটি অনুমোদনের সুযোগ নেই।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে