‘এত লাগত না কম হলেও চলত, ওসি স্যারও জানেন তাকেও দিতে হবে’

বিদেশে ভিসা আবেদন, গ্রিনকার্ড-ওয়ার্ক পারমিট বা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদের। কিন্তু এই সনদ নিতে সাধারণ মানুষকে প্রায়ই নানা হয়রানি, অতিরিক্ত কাগজপত্রের দাবি এবং ঘুষের মুখে পড়তে হয়- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি দিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। যা আবেদন করার সময় বিকাশ বা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথমেই নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর থানায় আর কোন অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। অথচ অভিযোগ উঠেছে- মাহমুদুল হাসান নামে একজনের কাছে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দাবি করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের এএসআই সুলতান মাহমুদ। ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসানের দাবি, নিয়ম মেনে আবেদন করেও তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং শেষে থানার বাইরে নিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়।
মাহমুদুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্লিয়ারেন্সের জন্য থানায় গেলে এএসআই সুলতান মাহমুদ প্রথমে কাগজে সমস্যা দেখান। সুলতান মাহমুদ আমাকে বলেন, আপনি এই থানার স্থায়ী লোক না, ক্লিয়ারেন্স দিতে সমস্যা হবে। পরে কেউ জানলে ঝামেলা হবে।
পরে সন্ধ্যায় আমাকে বাবা-মা-নানির জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিদ্যুৎ বিল আনতে বলা হয়। থানার বাইরে বের হওয়ার সময় সুলতান মাহমুদ আমাকে বলেন, সাথে মাল (টাকা) লাগবে।
ভুক্তভোগী মাহমুদুল আরও বলেন, সব কাগজ নিয়ে ফিরে গেলে এএসআই সুলতান মাহমুদ আমাকে থানার বাইরে নিয়ে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দেওয়ার পর তিনি বলেন- এত (টাকা) লাগত না, কম হলেও চলত। পরে বলেন- আপনার বিষয়টি যেহেতু ওসি স্যারও জানেন, তাকেও দিতে হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানার যেকোনো একটিতে আবেদন করা যায়। যদি পাসপোর্টে ঠিকানা না থাকে, তবে ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের সত্যায়িত স্ক্যানকপি প্রয়োজন। দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের স্ক্যানকপি দিয়ে দেশে যে কেউ আবেদন করতে পারেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের এএসআই সুলতান মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা লাগে না। কেউ খুশি হয়ে দিলে নেই। এটা বৈধও না। মাহমুদুলের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে পড়ছে না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্লিয়ারেন্সে কোনো টাকা লাগে না। আমার নামে কেউ টাকা নিয়েছে এটা জানতাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেহেদী হাসান সৈকত/এআরবি