ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির চমক

দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডাক্তার আব্দুস সালাম।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বহুদিন ধরে এই আসনে সম্ভাব্য মুখ নিয়ে চলা নানা আলোচনা ও গুঞ্জনের অবসান ঘটে এই ঘোষণায়।
দলীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসা পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সংগঠনী ভূমিকা এবং এলাকাভিত্তিক গ্রহণযোগ্যতা—সব মিলিয়ে ডা. সালামের নাম চূড়ান্ত করা হয়।
মনোনয়ন ঘোষণার পরেই ঠাকুরগাঁও-২ আসনে রাজনৈতিক মাঠে নতুন সজীবতা ফিরে আসে। এতদিনের নীরবতা ভেঙে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আবার সংগঠনে সরব হয়ে ওঠেন। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে শুরু হয় নতুন করে বৈঠক, বিশ্লেষণ আর প্রস্তুতি।
এর আগে, প্রথম দফায় গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। ওই তালিকায় ঠাকুরগাঁও-১ ও ৩ আসন থাকলেও ২ নম্বর আসনটি খালি রাখা হয়। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেন। জোটের কাছে আসনটি ছাড়ার গুঞ্জনও ছড়ায়। বিশেষ করে গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসানকে নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলে। একই সময়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন জামায়াতের প্রার্থীও।
অনেকে বলছিলেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে জামায়াত ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দেবে। আবার কেউ বলছিলেন, রাজনীতিতে নতুন মুখ হলেও ফারুক হাসান দিনরাত এলাকাজুড়ে প্রচারণায় ব্যস্ত, নিজের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছেন। পুরো জেলা যেন এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় আটকে ছিল। শেষ পর্যন্ত বিএনপির চূড়ান্ত ঘোষণায় সব গুঞ্জন থেমে যায়। প্রার্থী হয়ে ডা. আব্দুস সালাম নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ফিরিয়ে আনেন। দীর্ঘ অপেক্ষা, হতাশা আর সংশয়ের জায়গায় এখন এসেছে নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রস্তুতির গতি।
উপজেলা বিএনপি নেতা মান্নান বলেন, এই ঘোষণা ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রত্যাশিত। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাকে নিয়েই আমরা মাঠে সর্বশক্তি নিয়ে নামব। ডা. সালাম বহুদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে যুক্ত। তার নাম ঘোষণায় নেতাকর্মীরা আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। সংগঠনে সেই আগের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে।
উপজেলা যুবদল নেতা হাবিব বলেন, মনোনয়ন নিয়ে চলমান গুঞ্জন আমাদের সংগঠনচর্চাকে দুর্বল করছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর সংগঠন আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। এখন আর কোনো দ্বিধা নেই। নেতা পাওয়া গেছে, দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে। মাঠে কাজের গতি এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ।
ছাত্রনেতা ইলিয়াস আলী বলেন, এই আসনে যে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, একটি ঘোষণা তা শেষ করে দিয়েছে। বিএনপি কখনো মাঠ ছাড়ে না এই মনোনয়নই তার প্রমাণ। ডা. সালাম পরিচ্ছন্ন, শিক্ষিত ও স্বীকৃত একজন মানুষ। তাকে ঘিরে কর্মীদের মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. আব্দুস সালামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকছেন জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী ফারুক হাসান।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর এবং রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড়-কাশিপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২৫ জন। এর মধ্যে- বালিয়াডাঙ্গীতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৫ জন, হরিপুরে ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ জন আর রানীশংকৈলের দুই ইউনিয়নে ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো প্রক্রিয়া আমরা পরিচালনা করছি। নির্বাচন প্রস্তুতি এখন প্রায় চূড়ান্ত। প্রার্থী তালিকা থেকে দায়িত্ব বণ্টন সবকিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। ভোটারদের জন্য নিরাপদ, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যে-ই প্রার্থী হন, নিয়ম অনুযায়ী সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে