কক্সবাজারে বিক্ষোভের মুখে পিছু হটলো বিআইডব্লিউটিএ

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালীর তীরে নদী বন্দরের জন্য দখলমুক্ত জায়গার সীমানা চিহ্নিতকরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) স্থানীয়দের টানা পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মুখে অভিযান স্থগিত করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার থেকে কস্তুরাঘাট এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিলেন উচ্ছেদ হওয়া জমির মালিক দাবি করা স্থানীয়রা।
এ কারণে সীমানা চিহ্নিতকরণ এবং সীমানা প্রাচীরের পিলার স্থাপনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। রোববার থেকে নদী বন্দরের উদ্ধার করা ৬৩ একর জমির সীমানা চিহ্নিতকরণের কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও সেখানে গেলে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেদিনই সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজ স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি এই সংস্থার কর্মকর্তারা। গেল সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ। পাঁচ দিনব্যাপী ঘোষিত অভিযানের প্রথম দুই দিনে উচ্ছেদ করা হয় ৫ শতাধিক স্থাপনা। দখলমুক্ত করা হয় নদী বন্দরের জন্য নির্ধারিত ৬৩ একর জায়গা।
তবে উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন থেকেই স্থানীয়দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের কারণে অভিযান স্থগিত হয়। ওই ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ দুই হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করে মামলা করে। পরে নদী বন্দরের দখলমুক্ত জায়গা পুনরায় দখল ঠেকাতে স্থায়ীভাবে সীমানা চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের যৌথ জরিপ ম্যাপ অনুযায়ী নদী বন্দরের জন্য নির্ধারিত জায়গায় উচ্চ ও টেকসই সীমানা পিলার, সাইনবোর্ড এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
জমির মালিক দাবি করা বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বুধবার থেকে শুরু হয় তাদের এই বিক্ষোভ।
তাদের অভিযোগ, জমির মালিকানার স্বপক্ষে সব ধরনের নথিপত্র তাদের আছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তা মানতে চাইছে না এবং ব্যক্তিগত জমিতে জোর করে সীমানা নির্ধারণ করতে চাচ্ছে। আদালতের আদেশও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পারুল আক্তার নামে এক নারী বলেন, খতিয়ান আছে, খাজনা দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা কিংবা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যাবে না।
সাবিনা ইয়াসমিন নামে আরেক নারী বলেন, আমাদের জমি আমাদের ফেরত দিতে হবে। না হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে এখানে কোনো স্থায়ী স্থাপনা হতে দেব না।
আন্দোলনকারীরা জানান, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে হাইকোর্টে তিনটি মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযান স্থগিত রাখার দাবি তাদের।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আইনজীবী মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, তিনিসহ ৭৭ জন উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। আদালত উচ্ছেদ বন্ধ রাখতে বললেও তা মানছে না বিআইডব্লিউটিএ।
তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, কাউকে উচ্ছেদ বা মালিকানা বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নয়, বরং দখলমুক্ত জায়গার সীমানা চিহ্নিত করতেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। শুধু পিলার বসিয়ে সীমানা দৃশ্যমানের কাজ করার পরিকল্পনা ছিল। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ভাড়াটে লোক এনে গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উত্তেজিত পরিস্থিতি তৈরি এবং সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে নদী বন্দরের দখলমুক্ত জায়গার সীমানা চিহ্নিতকরণ আবার শুরু করা হবে বলে জানান কক্সবাজার নদী বন্দরের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল।
১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার নদী বন্দরের দখলমুক্ত জায়গার সীমানা চিহ্নিতকরণের কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অভিযান স্থগিত করেছে বিআইডব্লিউটিএ। অভিযান আবার চালানো হবে বলে জানালেও নির্দিষ্ট দিন ও তারিখ জানায়নি সংস্থাটি।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/এআরবি