শিক্ষার্থী নেই, পাঠদান ছাড়াই চলছে বেতন-ভাতা উত্তোলন

দিনের পর দিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, নেই শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা, ক্লাসরুমে তালা ঝুলছে, বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম তারপরও মাস শেষে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় সুশীল সমাজ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং নানা প্রশ্ন উঠছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি ক্লাসরুমে তালা ঝুলছে, কোথাও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। অফিস কক্ষে পাওয়া যায় মাত্র চারজন শিক্ষক-কর্মচারী, যদিও অনুমোদিত জনবল ৯ জন। উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন অধ্যক্ষ, একজন প্রভাষক এবং দুজন কর্মচারী। তবে কেউই শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখাতে পারেননি। অধ্যক্ষের কক্ষ বা প্রশাসনিক অফিস কোথাও কোনো উপস্থিতি রেজিস্টারও পাওয়া যায়নি। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী আছে কি না, তারা নিয়মিত আসে কি না তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ধানখোলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে সরকারি তহবিল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে দাবি করে যে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ৩২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ২২ জন শিক্ষার্থীর কোনো লিখিত নথি, ভর্তি রেজিস্টার বা প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দুই শিক্ষাবর্ষের ভর্তি তথ্য নিয়েই বড় ধরনের অসঙ্গতি ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। এমনকি কোনো প্রকার দৃশ্যমান তথ্য-প্রমাণও উপস্থাপন করতে পারেননি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাহাফিজুর রহমান বলেন, কিছু শিক্ষার্থী আছে, তবে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। নানা কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের হাজিরা বা ভর্তি সংক্রান্ত কোনো লিখিত প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন।
ধানখোলা গ্রামের ছমির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত একটি ভবন। শিক্ষকরা নিয়মিত না আসলে শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
পথচারী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রায় প্রতিদিন সকালে এই রাস্তা দিয়ে গাংনী যাই। কলেজটিকে কখনো খোলা দেখি না। মাঝে মধ্যে কয়েকজন শিক্ষককে দেখা যায় পতাকা উত্তোলন করে বসে থাকতে, তবে শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া যায় না।
আব্দুল আলিম জানান, শিক্ষকদের গাফিলতির কারণেই কলেজটি ধ্বংসের মুখে। সরকার প্রতি মাসে বেতন দিচ্ছে, অথচ শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস বা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। কোনো কাজ না করেই সরকারি টাকা তুলছেন, ফলে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কলেজটিতে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে এ তথ্য আমরা পেয়েছি। আগামী জানুয়ারিতে নতুন ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি শিক্ষার পরিবেশ আবার ফিরবে। এরপরও যদি শিক্ষকদের গাফিলতি থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা হয়েছে। শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তরিকুল ইসলাম/এআরবি