কমেছে প্রাকৃতিক জলাশয়, আবাসস্থল হারাচ্ছে শামুকখোল

এক সময় শীতের শুরুতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পরিযায়ী পাখি শামুকখোলের দেখা মিলত। তবে প্রাকৃতিক জলাশয় কমে যাওয়া ও খাদ্যের অভাবে ক্রমেই আবাসস্থল হারাচ্ছে এই পাখি। জেলার বেশিরভাগ জলাশয় ভরাট করে শিল্পায়ন ও মাছের খামার নির্মাণের কারণে প্রাকৃতিক জলাশয় এখন অস্তিত্ব সংকটে। ফলে আগের মতো আর দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখির।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চানপাত্তা বিল, মকস বিল, অলুয়া বিল, শালদহ, কাপাসিয়া ও কালিগঞ্জ উপজেলার বেষ্টিত বেলাই বিলসহ বিভিন্ন স্থানে শীতের শুরুতে বিপুল সংখ্যক শামুকখোলের আগমন ঘটত। গ্রামের বড় বড় গাছে রাতে তারা ঝাঁক বেঁধে বাস করত। আর দিনে বৃহৎ জলাশয়ে বিচরণ করে লম্বা ঠোঁট দিয়ে কাদামাটি থেকে শামুক কুড়িয়ে খেত। শুধু শামুকখোল নয়, শীতের শুরুতে জলাশয়গুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে বালিহাস, চকাচখি, গুলিন্দা, গাংচিলেরও অবাধ বিচরণ দেখা যেত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগেও জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শামুকখোলের বিচরণ ছিল। এ উপজেলার খালপাড়, দিঘিবাড়ী, বলিয়াদি জমিদারবাড়িসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে শামুকখোল চোখে পড়ত। তবে হঠাৎ করেই এসব এলাকায় এখন আর ওই পাখির দেখা মিলছে না।
কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার বেশিরভাগ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট হয়ে মাছের খামারে রূপ নিয়েছে। এতে জলাশয়ের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে এবং খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। যার ফলে শীতকালীন পরিযায়ী পাখির আগমন কমে গেছে।
আমিনুল ইসলাম নামে এক পাখি গবেষক জানান, দুই বছর আগেও তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েকটি স্থানে প্রচুর শামুকখোল পাখি দেখেছেন। তারা দলবেঁধে বিভিন্ন জলাশয়ের অল্প পানিতে খাদ্য সংগ্রহ করত। আর রাতে বড় বড় গাছে ঝাঁক বেঁধে আশ্রয় নিত। কিন্তু এ বছর তেমন পাখি চোখে পড়ছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে, এ অঞ্চলের প্রকৃতিতে এখন খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম ফখরুল হোসাইন জানান, প্রাকৃতিক জলাশয় ও পাখির আবাসস্থল রক্ষার পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন স্থানে পাখি শিকার ও কৃষিজমি-জলাশয়ে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। শীতকালীন পরিযায়ী পাখি প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাখি ও প্রকৃতি দুটিই রক্ষা করা সম্ভব।
এআরবি