এই দিনে সিরাজগঞ্জ ছাড়তে বাধ্য হয় পাকবাহিনী

আজ ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকেই সিরাজগঞ্জে অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়তে শুরু করে। একইসঙ্গে তাদের সহযোগী তথাকথিত শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর তৎপরতাও ক্রমে সীমিত হয়ে আসে। পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয় ১৩ ডিসেম্বর রাতে, যখন মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। স্থল ও নৌপথ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেও একমাত্র রেলপথ তখনও পাক বাহিনীর দখলে ছিল।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে ঘাট, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা, কাজিপুর মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমবেত হন। নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহর ছেড়ে ট্রেনযোগে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। রেকি করতে পাঠানো মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হলে শহরজুড়ে শুরু হয় বিজয়োল্লাস।
এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের যুদ্ধবিধ্বস্ত শহীদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা নতুন দেশ গঠনের শপথ নেন।
পাক বাহিনীর পলায়নের সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা এলাকাসহ অন্যান্য এলাকাও শত্রুমুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ওয়াপদা অফিসে অবস্থিত পাক বাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন। একই দিনে কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের সহকারী পরিচালক আব্দুল আজিজ সরকার বলেন, সিরাজগঞ্জ মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলে পাকবাহিনীর পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসীকতাই এই বিজয়ের মূল শক্তি।
মো. নাজমুল হাসান/এএমকে