স্বীকৃতিহীন শহীদ এএসআই আব্দুল লতিফের পরিবারের পাশে ডিসি

বিজয় দিবসের আগের দিন সুবিধাবঞ্চিত এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কন্যার পাশে দাঁড়ালেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) শামীমা বেগম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের পাশে দাঁড়ান।
শহীদ এএসআই আব্দুল লতিফ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত ছিলেন। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলায় তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ জুন শহীদ হন। তার নাম সিলেট পুলিশ লাইনের স্মৃতিস্তম্ভে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
শহীদ এএসআই আব্দুল লতিফের কন্যা শামীমা বেগম জানান, অজানা কারণে তারা কখনোই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য নির্ধারিত সরকারি সুবিধা পাননি। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজার থানার পাঁচলাইশ এলাকার বাদুরতলা জঙ্গিশাহ এলাকায় বসবাস করছেন।
শামীমা বেগমের স্বামী ২০১৬ সালে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত শামীমা গত মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। এতে পরিবারের আর্থিক সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান টিপু একটি ছোট দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তিনি চরম বিপাকে পড়েন।
জেলা প্রশাসক সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে নিয়ে রাউজান উপজেলায় পূর্বনির্ধারিত আইন-শৃঙ্ঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক যৌথ মহড়া ও মতবিনিময় সভা নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যেও জেলা প্রশাসক দীর্ঘ সময় ধরে তার কার্যালয়ে বসে শামীমা বেগমের দুরাবস্থার কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসার জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিজয় দিবসের আগের দিন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে তাদের পাশে থাকতে চাই।
ডিসির সহায়তায় আবেগাপ্লুত শামীমা বেগম বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদ, শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি এবং পুলিশ ফান্ডসহ আনুষাঙ্গিক সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে ডিসি স্যারের সহায়তা চেয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
শহীদ এএসআই আব্দুল লতিফের নাতি মিজানুর রহমান টিপু বলেন, আমরা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসকের এই মানবিক উদ্যোগ স্থানীয় মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এমএএস
