সাবেক সেনা কর্মকর্তা শামছুল ইসলাম সম্পর্কে যা জানা গেল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার ছোট ভাই নান্দাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল।
তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম (সূর্য) এর আগেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা বিষয়ক টিমের চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
এর আগে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার চরআনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত এএফএম ঈছহাকের সন্তান এ কে এম শামছুল ইসলাম। ব্যক্তি জীবনে বাবা ইছহাক ছিলেন ব্যবসায়ী। তার ৭ ছেলে এবং ৩ মেয়ের মধ্যে এই সেনা কর্মকর্তা ছেলেদের মধ্যে চতুর্থ। ছাত্রজীবনে তিনি অষ্টম শ্রেণিতে ময়মনসিংহ জেলায় প্রথম হয়ে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি লাভ করে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান পান। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রি অর্জন করে ফিলিপাইন ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে স্বর্ণপদক পান।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে প্রথম শ্রেণিতে মিলিটারি টেকনোলজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ সম্পন্ন করেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বিশেষ সামরিক ও কৌশলগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, চীন, ফিলিপাইন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭টি দেশে। সামরিক একাডেমিতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে ওসমানী গোল্ড মেডেল লাভ করে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হিসেবে দেশে ও বিদেশে স্টাফ কলেজ এবং গানারি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনে সেনাবাহিনীর এই চৌকস ও মেধাবী কর্মকর্তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে ফোর্স কমান্ডারের স্টাফ অফিসার ও ডেপুটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন। ইরাকে প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ এবং উপদেষ্টা হিসেবে কমর্রত ছিলেন। সেখানে তিনি ইরাক সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে গণতন্ত্র, সুশাসন, মাইগ্রেশন গভর্ন্যান্স, সিভিল সোসাইটি ট্রেনিং, ও কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সূত্র জানায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম পারিবারিকভাবে জাতীয়তাবাদী ঘরনার হওয়ায় কারণে পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার রোষানলে পড়েন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত চাকরি থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তার অপরাধ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ভাই সৌদি আরব পূর্বাঞ্চল বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম রফিকুল ইসলাম নান্দাইল আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
তবে বিগত সরকারের সময়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম নান্দাইল পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। এরপর থেকেই এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচরণা চালান। তবে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. একেএম শামছুল ইসলাম দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে সন্তানের জনক। এর মধ্যে বড় ছেলে প্রকৌশলী এবং ছোট ছেলে মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত। স্ত্রী ইশরাত জাহান মলি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল করিম বিপ্লব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম ব্যক্তি জীবনে এলাকাবাসীর কাছে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি দলের পরীক্ষিত একজন কর্মী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমিসহ এলাকাবাসী আনন্দিত। তার এই অর্জনে এলাকাবাসী গর্বিত।
মো. নূরুল হক নামের স্থানীয় এক বিএনপি কর্মী এ ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, শামছ সাহেব ( বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম) যে দায়িত্ব পেয়েছেন, এতে আমরা আনন্দিত। আল্লাহ তাকে আরও বড় মর্যাদা দান করুক।
এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর