‘আমার ছেলে আমাকে ছাড়া কিছু বুঝত না’– শহীদ শামীমের বাবা

‘আমার আব্বা (ছেলে) আমাকে ছাড়া কিছু বুঝত না। আমি ওকে কোনো দিন কষ্ট দিইনি, সেও আমাকে কোনো দিন কষ্ট দেয়নি। আজ আমার ছেলেটা চলে গেল। সবাই ওর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।’ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে শাহাদাত বরণকারী সেনাসদস্য শামীম রেজার জানাজার আগে কান্নজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তার বাবা আলমগীর ফকির।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজবাড়ীর কালুখালীতে শামীম রেজার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুপুরে তার মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও এলাকাবাসী।
শামীমের বাবা আলমগীর ফকির পেশায় একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘কৃষিকাজ করে অনেক কষ্টে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলাম। আট বছর আগে ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। গত ৭ নভেম্বর ও মিশনে সুদানে যায়। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর ওর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়েছিল। ও বলল, আব্বা তুমি ভালো থেকো, আমি ডিউটিতে যাব। ওইটাই শেষ কথা ছিল। ডিউটিতে গিয়ে আমার ছেলেটা আর ফিরল না।’

ছেলের স্মৃতিচারণা করে বাবা আরও বলেন, শামীম ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের ছিল। কাউকে কোনো দিন কটু কথা বলেনি বা কোনো বিবাদে জড়ায়নি।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর পৌনে দুইটায় সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে শহীদ শামীম রেজার মরদেহ ঢাকা থেকে কালুখালীর মিনি স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখান থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মরদেহ বাড়িতে না নামিয়ে সরাসরি জানাজাস্থলে নেওয়া হয়।
সেখানে প্রথমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। এরপর শহীদ শামীম রেজার জীবনী পাঠ করা হয় এবং তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। দাফন শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং মরণোত্তর সালাম দেওয়া হয়।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/বিআরইউ