শাজাহান খানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাহারা, যুবদলের আহ্বায়ককে শোকজ

মাদারীপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাড়িসহ তার ভাইদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার আশঙ্কায় মহড়া ও পাহারা দেওয়ার ঘটনায় মাদারীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বেপারীকে শোকজ করা হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিষয়টি জানাজানি হলে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তার এমন সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক নেতাকর্মী। এর আগে রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, জেলা যুবদলের আহ্বায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও তিনি সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন- এটি যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমতাবস্থায়, সংগঠনবিরোধী এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নের সামনে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওসমান হাদী হত্যার প্রতিবাদে গত শনিবার মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গ্রুপে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের বাড়ি ও তার ভাইদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বর্তমানে শাজাহান খান ও তার ছেলে আসিবুর রহমান আসিব খান কারাগারে রয়েছেন। তার ভাইয়েরা পলাতক থাকলেও মাদারীপুরে তাদের পরিবহন, আবাসিক হোটেল, পেট্রোল পাম্পসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রয়েছে।
মাদারীপুর শহরের চাঁনমারি মসজিদের সামনে শাজাহান খানের আলিশান দশতলা ভবনসহ তার ভাইদের চারটি বাড়ি, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পেট্রোল পাম্পে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না ঘটে, সে জন্য যুবদল নেতা ফারুক হোসেন বেপারীর নেতৃত্বে অন্তত অর্ধশত কর্মী শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহারায় ছিলেন। তাদের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন।
এ বিষয়ে শোকজপ্রাপ্ত মাদারীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বেপারী বলেন, সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সারাদেশে গাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও হতে পারে এমন একটি বার্তা কেন্দ্র থেকে আমরা পেয়েছিলাম। পরে ওসি ও এসপি সাহেব আমাকে ফোন দেন। তারা বলেন, আপনারা মাঠে থাকবেন। তাদের ফোন পাওয়ার পর আমরা যুবদলের ৪০ থেকে ৫০ জনকে চারটি দলে ভাগ করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিই।
তিনি আরও বলেন, মাদারীপুরে পাঁচটি স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা ছিল। তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য আমরা মাঠে ছিলাম। আমরা হাদির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছি এবং মহড়া দিয়েছি। তবে আমাদের দলে অনেক গ্রুপিং রয়েছে। তারা কেন্দ্রে ভুল তথ্য দিয়েছে। তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছে, আমরা নাকি শাজাহান খানের পেট্রোল পাম্প ও পরিবহনসহ সার্বিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাহারা দিয়েছি। শাজাহান খানের বাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আমরা পাহারা দিইনি, এটি একটি ভুল ধারণা। নাশকতার আশঙ্কায় আমরা পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক বেপারীকে শোকজ করার বিষয়টি শুনেছি। কেন্দ্রীয় যুবদল তদন্ত করে সত্যতা পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন-ওয়ার্ড বিএনপির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারি। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এগুলো কখনোই বিএনপি মেনে নেবে না। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। যারা এসব করে, তাদের বিরত থাকা উচিত।
আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এআরবি