সেই বাসায় মিলেছে মাদক ও নারী সঙ্গের আলামত

খুলনার সোনাডাঙ্গা আল আকসা মসজিদ রোডের মুক্তা হাউজের নিচ তলায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
এদিকে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। নৌ-বাহিনীর মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনার এনসিপির শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সিটি স্ক্যান রিপোর্ট স্বাভাবিক এসেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, তিনি আশঙ্কামুক্ত।
মুক্তা হাউজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে পুলিশ ওই বাসা থেকে বিদেশি মদের খালি পাঁচটি বোতল, একটি পিস্তলের গুলির খোসা, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি এবং অনৈতিক কার্যক্রমের আলামত উদ্ধার করেছে।
আরও জানানো হয়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগের দিন রাত সাড়ে ১২টায় দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ মোতালেব শিকদারের ভাড়া বাসায় আসে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনসিপি নেতা খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর অনুসারী সৌরভ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন এবং আগে থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। চাঁদার অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অন্তর্কোন্দল থেকে তাকে গুলিবিদ্ধ করা হতে পারে।
মোতালেব শুরুতে পুলিশের কাছে রাস্তায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এবং সেখান থেকে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন মিথ্যা জবানবন্দি দেন। এনসিপি নেতার নারী সঙ্গী তন্বীর বাসা ছিল মুক্তা হাউজে। এখানে গত দুই মাস ধরে মোতালেব শিকদার তন্বীর সঙ্গে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, গুলিটি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারে তার মাথার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আহত মোতালেব মিয়া বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।
মজিদ স্মরণীর মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী এক মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের যাতায়াত ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে তাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই নারী তন্বী ও অন্যরা লাপাত্তা রয়েছেন।
কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সকালে আমরা তথ্য পাই যে, এনসিপির একজন নেতা গাজী মেডিকেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে যাই। শুরুতে ঘটনাস্থল ও কোনো সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে এনসিপির ওই ভিকটিমের একটি প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। লাজফার্মা এলাকা থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমসহ আরও দুইজন সেখানে আসে এবং কিছু সময় অবস্থান করে। ওই সূত্র ধরে আমরা মুক্তা হাউজে যাই। ওই কক্ষ থেকে মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের নাম জানা যাবে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। গুলিটি তার মাথার ভেতরে ঢোকেনি, চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত।
মোহাম্মদ মিলন/এআরবি