শেরপুর থেকে ঢাকায় যাবেন ১০-১৫ হাজার বিএনপি নেতাকর্মী, প্রস্তুত ১২০ বাস

দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরে সারাদেশের মতো শেরপুর জেলাজুড়েও ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, তাকে বরণ করে নিতে শেরপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় যাবেন। এ উপলক্ষে শেরপুরের পাঁচটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভা থেকে প্রায় ১২০টি বাসসহ অসংখ্য ছোট-বড় মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে পরিবারসহ লন্ডনে প্রবাসে থাকা এই শীর্ষ নেতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূলের কর্মীরা। তাদের ভাষ্য, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে শেরপুর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের তিনটি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হলেন- শেরপুর-১ আসনে ডা. সানসিলা প্রিয়াঙ্কা, শেরপুর-২ আসনে ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী এবং শেরপুর-৩ আসনে মাহমুদুল হাসান রুবেল। তাদের নেতৃত্বে পুরো জেলাজুড়ে ঢাকাগামী যাতায়াতের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
শেরপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি সৈকত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ থেকেই অনেক নেতা-কর্মী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। জেলার প্রায় সব মাইক্রোবাস রিজার্ভ করা হয়েছে এবং আগামীকাল সকাল থেকে পাঁচটি উপজেলা থেকেই বাসগুলো ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শেরপুর-১ আসনের প্রার্থী ডা. সানসিলা প্রিয়াঙ্কা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের বিষয়। তার দিকনির্দেশনায় পরিচালিত আন্দোলনে আমাদের বহু নেতা-কর্মী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা আশা করছি, তার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র সদর উপজেলা থেকেই ৬০টি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে।
শেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শেরপুর-২ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তার দেশে ফেরা আমাদের চলমান আন্দোলন ও নির্বাচনী কার্যক্রমে নতুন গতি সঞ্চার করবে। তিনি জানান, নকলা ও নালিতাবাড়ী অঞ্চল থেকে অন্তত ৩০টি বাসসহ বহু যানবাহনে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাবেন।
শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শেরপুর-৩ আসনের প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিটেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তরুণ প্রজন্মও এ নিয়ে দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত। তার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার আসন থেকেও প্রায় ৩০টি বাসসহ অসংখ্য যানবাহনে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাচ্ছেন এবং অনেকে ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছেন।
শেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার প্রতিটি ইউনিট থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা সম্ভব না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, শেরপুর থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় যাবেন। ইতোমধ্যে অনেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান। সেখান থেকেই তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে লন্ডন থেকেই তিনি দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর তার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
নাইমুর রহমান তালুকদার/এআরবি