তারেক রহমানকে বরণ করতে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন ৫০ হাজার নেতাকর্মী

দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর স্বপরিবারে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই আগমন স্মরণীয় করে রাখতে দলীয়ভাবে বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নিতে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার নেতাকর্মী। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এমন দাবি করেছেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এরই মধ্যে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে কোটি মানুষের সমাগম ঘটবে। এই প্রত্যাবর্তন ঐতিহাসিক মিলনমেলায় রূপ নেবে। কোটি মানুষের প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখা যাবে এ মিলনমেলায়। এটি দেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগের জায়গা। দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন শেষে এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন মজলুম নেতার ঘরে ফেরা নয়, এটি ইতিহাসের ঘরে ফেরা।
প্রিন্স আরও জানান, এ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের দলীয় প্রার্থী এবং মহানগর ও উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। ট্রেন, বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাতায়াতের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, শুধুমাত্র ময়মনসিংহ মহানগর ও সদর আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দের নেতৃত্বে ৫০টি বাসসহ মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার নেতাকর্মী তারেক রহমানকে বরণ করতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক এনামুল হক আকন্দ লিটন। তিনি আরও জানান, মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষক দলের আরও প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
ঢাকায় যাতায়াতের জন্য মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও যমুনা এক্সপ্রেসের টিকিট ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. রোকনুজ্জামান সরকার রোকন। তিনি বলেন, তারেক রহমানের আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ভিড় এড়াতে অনেক নেতাকর্মী আগেভাগেই ঢাকায় চলে গেছেন। বাকিদের জন্য জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলা থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক বাস ও অন্যান্য যানবাহনে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের আগমন পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করবে। একজন নির্বাসিত মজলুম নেতার ঘরে ফেরার এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন থেকে প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী তারেক রহমানের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। বিগত আন্দোলনে আয়নাঘরে নির্যাতনের শিকার এই বিএনপি নেতা বলেন, তারেক রহমানের এই আগমন হবে ঐতিহাসিক। এর আগে এমন নজির আর একটিও নেই। সেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃখ কাটিয়ে কোটি মানুষ আবেগের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপি কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. জুয়েল মিয়াও তারেক রহমানের আগমনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতীতে বহুবার গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও মারধরের শিকার হয়েও শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভালোবাসায় এই পার্টি অফিস আগলে রাখার চেষ্টা করেছি। তার আগমনে আমি খুবই আনন্দিত। নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক আনন্দ দেখা যাচ্ছে। তারা কীভাবে ঢাকায় যাবে, কখন যাবে এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। আমার বিশ্বাস, তারেক রহমানকে বরণ করতে ময়মনসিংহ থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।
জেলার ৬টি উপজেলা থেকে প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে তারেক রহমানের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ছাত্রদল অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুল হাকিম আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব হোসেন। তারা বলেন, তারেক রহমানের আগমনে নেতাকর্মীরা উদ্বেলিত। সেদিন ঢাকার অলিগলি থেকে রাজপথ সবখানেই থাকবে মানুষের ঢল।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে নিয়মিত চলাচলকারী ট্রেনের পাশাপাশি তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি জানান, ১০টি বগি ও একটি পাওয়ারকারসহ একটি স্পেশাল ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামীকাল এটি ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর পাঠানো হবে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় ট্রেনটি জামালপুর থেকে ছেড়ে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সকাল ৯টায় গন্তব্যে পৌঁছাবে। যাত্রাপথে সব স্টেশন থেকে নেতাকর্মীদের ওঠানো হবে। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেনটি ঢাকা থেকে জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের ঘরে ফেরা উপলক্ষ্যে সারা দেশ ঢাকামুখী হবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। তিনি বলেন, ওই দিন ময়মনসিংহ থেকে ৪ থেকে ৫ শত বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। সেদিন সারা দেশই হবে ঢাকামুখী। এতে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর আগামীর বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। সেদিন দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর এক মহামিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মজলুম নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
এদিকে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে ময়মনসিংহ মহানগরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মিছিলে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
আমান উল্লাহ আকন্দ/এআরবি