বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন রাশেদা

ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে এসে রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন মাগুরা সদর উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের তরুণী রাশেদা আক্তার (২২)। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের সামনে ফুটপাতে একটি ট্রলিতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। পরে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে বড় বোন খালেদা আক্তার ও ভগ্নিপতি মামুন রাশেদার লাশ শনাক্ত করেন।
স্বজনদের দাবি, রাশেদাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের ভাষ্যমতে, মাগুরার আলোকদিয়া অমরেশ বসু ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর মাত্র ১৬ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য তিনি ঢাকায় আসেন এবং মিরপুরে বোনের বাসায় থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য গার্মেন্টসে চাকরি করছিলেন তিনি।
নিহতের ভগ্নিপতি মামুন বলেন, গত শনিবার রাশেদা কর্মস্থলে যাননি। রাত ৮টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরে জানা যায়, ওই রাতে প্রতিবেশীর ছেলে নয়ন মিরপুরে রাশেদার বাসার সামনে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন। একটি দোকানের সামনে তাদের দুজনকে প্রচণ্ড ঝগড়া করতেও দেখা গেছে। এরপর থেকেই রাশেদা নিখোঁজ ছিলেন এবং তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে আমরা মিরপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। পরে জানতে পারি একটি অজ্ঞাত নারীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রয়েছে। পরে আমরা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে মরদেহ শনাক্ত করি।
নিহতের বড় বোন খালেদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবেশী মতিউর রহমানের ছেলে নয়ন ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে রাশেদাকে উত্যক্ত করতেন। বিষয়টির কারণে রাশেদার পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছিল। তিনি দাবি করেন, নয়নই শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঢামেকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আজম জানান, নিহতের স্বজনরা মঙ্গলবার রাতে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। নয়নকে ধরা গেলেই কি ঘটেছিল সে বিষয়টি জানা যাবে। অভিযুক্ত নয়নকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
রাশেদার মৃত্যুতে মাগুরার আলোকদিয়া–পুকুরিয়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের ভাষ্যে, রাশেদা ছিলেন পড়াশোনায় মনোযোগী ও স্বপ্নবান এক তরুণী। উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে মাত্র ১৬ দিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন। কেউই ভাবতে পারেনি, স্বপ্ন পূরণের পথে থাকা মেয়েটি এভাবে লাশ হয়ে ফিরে আসবে।
গ্রামজুড়ে এখন শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন— এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
তাছিন জামান/আরকে