টানা ছুটিতে বান্দরবানে ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড়

শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলার ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ভ্রমণের জন্য পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকে পাহাড় কন্যা বান্দরবান। পাহাড়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই শীতের আগমন ঘটেছে। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতিও তার রূপ বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যে সেজে উঠেছে। ফলে টানা তিন দিনের ছুটিতে বান্দরবানে ভিড় করেছেন পর্যটকরা।
বছরের সব সময় জেলার দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সমাগম থাকলেও শীত মৌসুমের এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। প্রশাসনের সকল নিয়ম মেনে জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলা, লামা, আলীকদম, থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সকল দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি।
জানা গেছে, শীতের সকালে দূরের পাহাড় দিনের অনেকটা সময় ধরেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। প্রকৃতি প্রেমীরা খুব ভোরেই নিজেদের পছন্দের দর্শনীয় স্থানগুলোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে চাঁদের গাড়ির কাউন্টাররে ভিড় জমাচ্ছেন। কাউন্টারে নির্দিষ্ট বিল পরিশোধ করে ভাড়া করা চাঁদের গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিকলেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, তমাতুঙ্গীসহ দর্শনীয় স্থানে। পরিবার পরিজন আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে পর্যটকরা ছুটছেন নীলাচলের পাহাড় থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং।
পাহাড়ের সৌন্দর্যের মাঝে নিজের মনের প্রশান্তি আর প্রকৃতির মাঝে নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাহাড় থেকে ঝর্ণায়। সাঙ্গু নদীর বুকে পরিবার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়েও নৌকা ভ্রমণে যাচ্ছেন কেউ কেউ। নিজের হাতের মোবাইল ফোনটাই যেন এই নির্মল আনন্দের এই সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে ছবির ফ্রেমে বন্দি করার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
জেলায় আগত পর্যটকরা বলেন, শীতের এই সময়টাতে পরিবার আর বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য বান্দরবান আমাদের প্রথম পছন্দ। নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকলেও এখানে আশার পর আমরা অনেক খুশি।
পর্যটকদের বরণে জেলার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট সাজানো হয়েছে। আগত পর্যটকদের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে বেড়ানোর জন্য পরিবহন সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে জানান, লম্বা ছুটি আর বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় এই সময়ে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। গত কয়েকদিন পর্যটকদের আবাসিক সুবিধা দিতে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। আশা করছি শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে।

এদিকে সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর পর সন্ধ্যায় জেলার সাঙ্গু ব্রিজ সংলগ্ন সেনাবাহিনীর পরিচালিত মেঘদূত রেস্তোরাঁ, পর্যটকদের জন্য নিরিবিলি সময় কাটানোর পছন্দের স্পটে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আছে রোয়াংছড়ি বাস-স্টেশন এর কাছেই ঝিঝি পোকার বাড়ি। যেখানে নির্মল পরিবেশে সময় কাটাতে পারবেন পর্যটকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান জেলায় আগত পর্যটকদের পছন্দসই, মানসম্মত বাংলা খাবার, চাইনিজ, বারবিকিউ, সি-ফুডসহ রকমারি খাবারের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে মেঘদূতে। রেস্তোরাঁটি সেনাবাহিনীর পরিচালিত হওয়ায় এর চারপাশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপ সেবাকেন্দ্রের দায়িত্বশীল মো. কামাল হোসেন জানান, পর্যটকবাহী ৩০০টি গাড়ির মধ্যে গত এক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন ২৮০-৩০০টি চাঁদের গাড়ি জেলা সদর হতে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকরা ভাড়া নিয়ে গেছেন। এই মৌসুমে জেলায় পর্যটকের সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি থাকে।
দ্য কিউবি হলিডে হোমস অ্যান্ড ক্যাফের ম্যানেজার মো. ইসমাঈল জানান, এই মৌসুমেও জেলায় প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা বেড়েছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা আমরা দিয়ে আসছি।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ বান্দরবান রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী জানান, জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। প্রশাসনের আইন মেনে পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এদিকে টানা ছুটি থাকায় বেশীর ভাগ হোটেল-মোটেলের রুম আগাম বুকিং থাকায় পর্যটকদের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে পছন্দের রুম পেতে। কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে নিচ্ছেন হোটেলের রুম। অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির বাড়তি ভাড়া, খাবার হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ করেছেন আগত অনেক পর্যটক। এতে অনেকেই ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে ফিরছেন আপন নীড়ে।
শহীদুল ইসলাম/আরএআর