মাদক ভাগাভাগি নিয়ে খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলি : র্যাব

মাদক ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুলনায় এনসিপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদারের ওপর গুলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা র্যাব-৬-এর সদরদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
এর আগে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর বসুপাড়া এলাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শামীম শিকদার ওরফে ডিকে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম এবং মাহাদিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৬। এর আগে এ মামলায় আরও এক সন্দেহভাজন আসামি মো. আরিফ এবং এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির খুলনা জেলার যুগ্ম সদস্যসচিব তানিমা তন্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মেজর মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই র্যাব-৬-এর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। পরে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্য, সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনার সন্দেহভাজন মো. আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে সোনাডাঙ্গা থানার বসুপাড়া এলাকা থেকে শামীম শিকদার ওরফে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম এবং মাহাদিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। সে নিজেই মোতালেব শিকদারের মাথায় গুলি করেছে বলে র্যাবকে জানিয়েছে।
শামীমের বরাত দিয়ে মেজর মো. নাজমুল ইসলাম জানান, তানিয়া তন্বীর বাসায় মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে শামীমসহ আরও চার থেকে পাঁচজন সহযোগী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তার আগেই ওই ঘরে তন্বী, মোতালেব শিকদার, আরিফ, ইফতি, তানভীর (তন্বীর স্বামী), ইমরান (তন্বীর বন্ধু) এবং ইফতির চাচাতো ভাই উপস্থিত ছিলেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, তন্বীর বাসা থেকেই মাদকের ব্যবসা ও সরবরাহ করা হতো।
মোতালেবের কাছে মাদক উদ্ধারের চেষ্টা করে তা না পেয়ে ক্ষোভের বশে শামীম তার কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে মোতালেবের মাথায় গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে গুলিটি মাথায় বিদ্ধ না হওয়ায় মোতালেব প্রাণে বেঁচে যান।
মেজর মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শামীম শিকদার ওরফে ডিকে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম সোনাডাঙ্গা এলাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দস্যুতা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনাটি মূলত খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘটিত হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, মোতালেব শিকদার হত্যা প্রচেষ্টা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর তদন্ত কার্যক্রম অনেকটাই এগিয়েছে বলে দাবি করেছেন ডিবির ওসি তৈয়মুর ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ স্মরণী রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় তানিয়া তন্বীর ফ্ল্যাটে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়। এ ঘটনার পরদিন ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে মোতালেবের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মোহাম্মদ মিলন/এআরবি