সেন্ট মার্টিন যাওয়া-আসায় ১৯ ঘণ্টা, পর্যটকদের ভোগান্তি

সেন্ট মার্টিন থেকে রাত ৮টায় যাত্রা করে দীর্ঘ প্রায় ৮ ঘণ্টা পর কক্সবাজারে ফিরে এসেছে পর্যটকবাহী পাঁচটি জাহাজ। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাটে ফিরে আসা পর্যটকদের চোখে-মুখে ছিল ক্লান্তির চাপ। নির্ধারিত সড়কযাত্রা বিঘ্নিত হওয়ায় অনেকেই পড়েছেন ভোগান্তিতে।
এর আগে, রোববার সকাল ৭টার দিকে জাহাজগুলো ১ হাজার ৯০৫ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছায় এবং মাত্র দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর আবারও কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মুবিনুল আমিন বলেন, আমরা চারবন্ধু মিলে গতকাল (শনিবার) কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজে সেন্টমার্টিন যাই, একই জাহাজে আমাদের ফেরার কথা ছিল আজ রাত ১০টার দিকে। সে হিসেবে রাতের বাস টিকেট কেটেছিলাম। কিন্তু জাহাজ দেরি করায় এখন সেটা মিস হয়েছে, কালকের অফিসিয়াল প্ল্যানগুলো নষ্ট হলো। এমন অবস্থা আসলে কষ্টদায়ক কিছু করা নেই।
ব্যবসায়িক কাজে কক্সবাজার আসা সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা কেফায়েত খান বলেন, এশার পর রওনা দিয়ে ৮ ঘণ্টা পর কক্সবাজার পৌঁছেছি, আরেকটু পরেই ফজর হবে। তীব্র শীতের মধ্যে সাগরে এত লম্বা জার্নি কষ্টের। টেকনাফ বা ইনানী থেকে জাহাজ গেলে সময় বাঁচত।
পর্যটকদের যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন সেন্টমার্টিনে পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরাও। মোহাম্মদ নুর নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, আগে যেখানে মাত্র ৩ ঘণ্টা লাগত এখন ১০-১২ ঘণ্টা লাগছে পর্যটক আসতে। এমনিতেও অনেক বিধিনিষেধ, তার ওপর শিপ যাওয়া-আসায় দেরি। জানি না ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে দ্বীপবাসীদের জন্য। এভাবে চলতে থাকলে এখানকার পর্যটন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
জাহাজ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঁকখালী নদীতে নাব্যতা ও তীব্র কুয়াশার কারণে সকালে যাত্রা করার মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যেই মোহনার কাছে আটকা পড়ে জাহাজগুলো এবং নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টার পর ছেড়ে যাওয়ায় বিলম্ব হয়েছে।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন বাহাদুর ইসলাম বলেন, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। কুয়াশায় জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ আর ভাটায় চরে আটকে গেলে জাহাজ ছাড়তে বিলম্ব হয়। এই মৌসুমে মাত্র দুই মাস (৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত) জাহাজ চলবে। এই সময়কালে রাত্রীযাপনের সুযোগ থাকায় পর্যটকরা ভ্রমণ করছেন, কিন্তু কিছু বিধিনিষেধ ও দীর্ঘযাত্রাসহ অনেক কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে, যেগুলো নিরসনে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের পর্যটন শিল্পের স্বার্থে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এদিকে, গত ২৭ ডিসেম্বর সকালে সেন্ট মার্টিন যাত্রার আগেই দি আটলান্টিক জাহাজে অগ্নিকাণ্ডে এক কর্মচারী মারা যান, সৌভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন ১৯৪ পর্যটক।
একই দিনে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় জেলা প্রশাসন । যার মধ্যে রয়েছে, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও ফিটনেস আছে কি না তা ফের যাচাই করা এবং এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জাহাজগুলোই কেবল সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচল করার সুযোগ পাবে।
১ ডিসেম্বর চলাচল শুরুর পর সরকার ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করে গত ২৮ দিনে প্রায় ৪৯ হাজার পর্যটক (প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার) সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/এএমকে