চুয়াডাঙ্গায় হাড় কাঁপানো শীত, বিপর্যস্ত জনজীবন

হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা হঠাৎ করে ৪ ডিগ্রিরও বেশি কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল, অসহায় ও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আগামী দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে, মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করেই চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।
ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা ও হিমশীতল বাতাসে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে চাইছেন না। তবে জীবিকার তাগিদে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। জেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও চায়ের দোকানের সামনে খড়কুটো, কাঠ ও পুরনো টায়ার জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষদের।
গ্রাম থেকে শহরে আসা ভ্রাম্যমাণ মুরগি বিক্রেতা ইয়ারুল আলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোরে বাইসাইকেল নিয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে হাঁস-মুরগি বিক্রি করি। সাধারণত বেলা ১১টার মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু গত দুইদিন তীব্র শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বিক্রি কম, ফিরতে দুপুর হয়ে যাচ্ছে।
দিনমজুররা বলেন, এক দিন কাজ না করলে সংসার চলবে না। তাই প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও কাজে বের হয়েছি। আজ ঠান্ডা বেশি, হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তারপরও পরিবারের জন্য কাজ করতে হচ্ছে।
৭০ বছর বয়সী ভ্যানচালক মিনারুল হক বলেন, খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। মনে হচ্ছে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। হালকা বাতাসেই শরীর কাঁপছে। এভাবে আরও কয়েকদিন চললে সকালে বের হওয়া মুশকিল।
একজন হোটেল কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন সকালে নাশতার চাপ থাকে। তাই ফজরের আজানের পর থেকেই কাজ শুরু করতে হয়। ভোরে পানিতে হাত দিলে আঙুল নাড়ানো যায় না। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করছি।
শীতের তীব্র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্বাস্থ্যখাতেও। সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডাজনিত জ্বর ও ডায়রিয়ায়।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। রাত ও ভোরে শীতের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আফজালুল হক/এএমকে