মৃত্যুর খবর শুনেই ছুটে যান তারা

কাঠমিস্ত্রি ইউনুস আলীর বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বহেরারচালা গ্রামে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হলেও আশপাশের এলাকার কোনো মানুষের মৃত্যুসংবাদ শুনলেই কারও ডাকের অপেক্ষা করেন না তিনি। নিজের সব কাজ ছেড়েছুড়ে ছুটে যান মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোদাই করতে। সঙ্গে থাকেন অটোচালক ফারুক মিয়াসহ পাঁচ-সাতজনের একটি দল। কবর খোঁড়াই যেন তাদের নেশা হয়ে গেছে।
সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে দীর্ঘদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছেন। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে তাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। কারও মৃত্যু হলেই সমাজের লোকজন স্মরণ করেন তাদের কিন্তু নিঃস্বার্থ শ্রম দেওয়া এ মানুষগুলোর খবর অন্য সময় রাখে না কেউ।
দলনেতা ইউনুস আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এলাকায় কেউ মারা গেলে তার সৎকারের জন্য কবর খনন করে দিই। চার-পাঁচজন সমবয়সী একটি দল এ কাজ করছি। কবর খননে আমরা কোনো পারিশ্রমিক নিই না। সামাজিকভাবে কারও সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হলেও তার মৃত্যুর পর সব ভুলে এগিয়ে যাই। সর্বাত্মক চেষ্টা করি শেষ বিদায়টা সুন্দরভাবে দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের এ দলে অধিকাংশই দিনমজুর। তবে কারও মৃত্যুসংবাদ পেলে সবাই যার যার কাজ ফেলে স্বেচ্ছাশ্রমের এ কাজে যোগ দিই। তবে দিন দিন এ কাজে আসতে মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অটোচালক ফারুক মিয়া বলেন, সবাই কবর খনন করতে জানে না। আমরা অনেকটা সামাজিক দায়বদ্ধতা, মনের প্রশান্তি পাওয়া ও পরকালের পুণ্যের আশায় দীর্ঘ সময় ধরে এ কাজ করে আসছি। কারও মৃত্যুসংবাদে নিজের কাজ ফেলে সবার আগেই বিশেষ যন্ত্রগুলো নিয়ে ছুটে যাই। খুব যত্ন করে তৈরি করি মৃত ব্যক্তির শেষ ঠিকানা।

স্থানীয় সমাজকর্মী পর্যটক শাফি কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যেতে বসেছেন কবর খননকারীরা। এখন যারা আছেন এলাকায়, কেউ মারা গেলে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই নিজেদের কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন। তারা অনেকে দিন এনে দিন খান কিন্তু এ কাজে তারা কোনো পারিশ্রমিক নেন না।
তিনি বলেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় প্রয়োজনে তাদের ডাকলেও বাকি সময়গুলোয় এ মানুষগুলোর কোনো খবর আমরা রাখি না। সরকারের উচিত এলাকাভেদে এসব মানুষকে সম্মানীর ব্যবস্থা করা।
গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কবর খননকারীরা সামাজিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, এটা ভালো কাজ এবং তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে এখন পর্যন্ত কবর খননকারীদের সহায়তা করার মতো সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে তাদের মধ্যে যদি কোনো বয়স্ক ব্যক্তি থাকেন, তাহলে সরকারি সহায়তা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এনএ