দেশে প্রথমবার স্বর্ণপদক ঘরে তুলেছেন মারুফ

বাংলাদেশের হয়ে সম্প্রতি এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক ঘরে তুলেছেন মারুফ হাসান রুবাব। এবার ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেও (আইএমও) এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম পাটুলী গ্রামের আব্দুস সালাম ও শামিমা আক্তার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মারুফ। তার মা গৃহিণী আর বাবা ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়া বন কর্মকর্তা। আব্দুস সালাম আনন্দ মোহন কলেজ থেকেই গণিতে স্নাতক এবং ঢাবি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা পেশায়ও ছিলেন।
জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডের ব্যাপারে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা হয়। তখনই বিষয়টার প্রতি আগ্রহ জাগে। পরে ২০১৫ সালে বন্ধুদের সঙ্গে আমিও প্রথমবার ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রানার্সআপ হই। এভাবেই গণিত অলিম্পিয়াডে যাত্রা শুরু। এরপর আর থেমে থাকিনি।
মারুফ সপরিবার এখন থাকেন ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া হাজী বাড়ি এলাকায়। সরেজমিনে সেখানে কথা হয় মারুফের সঙ্গে, আলোচনায় উঠে আসে নানা বিষয়। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, গণিতের প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই ছিল। গণিতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করতাম। স্কুলে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে গণিতেই বেশি জোর দিয়েছি। পরে খুব সহজ লাগত। সেখান থেকেই মূলত আগ্রহটা আরও বাড়ে।
মারুফ বলেন, জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডের ব্যাপারে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা হয়। তখনই বিষয়টার প্রতি আগ্রহ জাগে। পরে ২০১৫ সালে বন্ধুদের সঙ্গে আমিও প্রথমবার ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রানার্সআপ হই। এভাবেই গণিত অলিম্পিয়াডে যাত্রা শুরু। এরপর আর থেমে থাকিনি।
২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াডে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়ে মারুফ হন চ্যাম্পিয়ন। পরের বছর হন দ্বিতীয়। ২০১৮ সালে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে হন চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন। ২০১৯ সালেও মেলে একই সাফল্য। ২০২০ সালে হায়ার সেকেন্ডারিতে বিজয়ীদের তালিকায় থাকেন মারুফ।

জাতীয় আসর ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মেধার স্বাক্ষর রেখে এসেছেন মারুফ। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) অংশ নিয়ে পান বিশেষ সম্মাননা এবং ২০২০ সালে ব্রোঞ্জপদক। তবে এ বছর এসেছে সবচেয়ে বড় সাফল্য। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে (এপিএমও) অংশ নিয়ে দেশে এনেছেন স্বর্ণপদক। বাংলাদেশ ২০১০ সাল থেকে এপিএমওতে অংশ নিলেও স্বর্ণপদক ছিল অধরা। অবশেষে মারুফের হাত ধরেই সম্প্রতি এসেছে স্মরণীয় এ সাফল্য।
আনন্দ মোহন কলেজের এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো এপিএমওতে স্বর্ণপদক পাওয়ায় আমার খুবই ভালো লাগছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। এখন লক্ষ্য আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জেতা। যেটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ থেকে ২০ জুলাই। এ জন্য নিচ্ছি বাড়তি প্রস্তুতিও।
অংশগ্রহণকারীদের জন্য মারুফের পরামর্শ
গণিত অলিম্পিয়াডে প্রাইমারি ক্যাটাগরি থেকে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরি পর্যন্ত চারটি ধাপে অংশগ্রহণ করা যায়। মূলত প্রথম ধাপ থেকেই অংশগ্রহণকারীদের ভিত্তি তৈরি করতে হয়। কখনোই বেশি চাপ নেওয়া যাবে না। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিশ্রম করলেই সফল হওয়া যাবে। আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে ভালো করলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করার সুযোগ থাকে।
মারুফের এমন সাফল্যে গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও শিক্ষকরা। তাদের প্রত্যাশা আসন্ন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেও মেধার স্বাক্ষর রাখবেন মারুফ, দেশকে এনে দেবেন আরও একটি স্বর্ণপদক।
মারুফের বাবা আব্দুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারুফ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। ছোটবেলা থেকেই তার চেষ্টা ছিল বিধায় সে এত দূর এগিয়েছে। সামনে রয়েছে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। আমরা আশাবাদী, মারুফ এখানেও স্বর্ণ নয়তো সিলভার জিতে নেবে। একই রকম প্রত্যাশা মারুফের মা শামিমা আক্তারেরও।
মারুফের শিক্ষক আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক আজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারুফ শান্তপ্রকৃতির ছেলে। তাকে যা পড়ানো হয়, সব সময় সেটি গ্রহণ করে দক্ষতার সঙ্গে। সে আইএমওতে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। এবার এপিএমতে স্বর্ণপদক পেয়েছে। এতে আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এ পদকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে মারুফ। আসন্ন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডেও মারুফ সেই ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা রাখি।
এবারই শেষবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন মারুফ হাসান রুবাব। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে তার শেষটা যেন হয় স্মরণীয়, এমন প্রত্যাশাই করছেন সবাই। এরপর দেশের বাইরে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিষয়ে অথবা বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান মারুফ।
এনএ