গ্রামবাসীকে অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেন সৌদিপ্রবাসী আমিনুল

করেনাকালীন মুহূর্তে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয় রোগীকে। কিন্তু সেটা সম্ভব যদি পর্যাপ্ত মেডিকেল সুবিধার আওতায় থাকে রোগীটি। আর গ্রামের বেলায় তো এসব চিন্তা সুদূরপ্রসারী। যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা আবার এবড়োখেবড়ো সড়ক হলে তো সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। তখন রোগীকে হয় পথেই মরতে হয়, না হয় হাসপাতালে নিলেও অবস্থা সংকটে চলে যায়।
এমন উপলব্ধি থেকেই মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের আবদুল হকের ছেলে আমিনুল ইসলাম গ্রামবাসীর চিকিৎসায় একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেন। শুধু করোনা রোগীই নয়, গ্রামের যেকোনো রোগীই হাসপাতালে যেতে বিনামূল্যে ব্যবহার করবে প্রবাসীর দেওয়া উপহারের এই অ্যাম্বুলেন্স।
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে গ্রামের মাতবরদের হাতে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ও অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন। তাছাড়া প্রতি মাসের জ্বালানি ও চালকের বেতনও প্রদান করবেন মানবিক ওই প্রবাসী। তার দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। এমন মানবিক উপহার সংকট মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সৌদিপ্রবাসী আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেহেরপুর সদর থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অটোভ্যানে যেতে অনেক সময় লাগে। দ্রুত হাসপাতালে না পৌঁছাতে পেরে অনেক রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। গ্রাম থেকে দূরের কোনো হাসপাতালে যেতে হলে ভাড়াটে মাইক্রো বা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তাও আবার সঠিক সময়ে পাওয়া মুশকিল।
গ্রামের যুবক মাসুদ রানা বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষ আমিনুল ইসলাম বর্তমান সৌদিপ্রবাসী। অনেক বছর আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়ে সাবলম্বী হন। তার কাছে আমরা দাবি করলে তিনি এ দুর্যোগ মুহূর্তে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেন। তার এ উপহার সময় উপযোগী হিসেবে এলাকার সব মানুষের দুঃসময়ে উপকারে আসবে।
রাজনগর গ্রামের প্রবীণ ইসমাইল হোসেন বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ আছে, যারা ভাড়ার অভাবে জরুরিভাবে হাসপাতালে যেতে পারে না। আমিনুলের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্স তারাসহ এলাকার মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা পাবে। এ উপহার আমাদের জন্য অনেক বড় উপহার। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. সজিব উদ্দিন সাধিন বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক মানুষই প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে, বিশেষ করে স্ট্রোকজনিত। রোগীর ক্ষেত্রে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগী পরিবহনে আমিনুল ইসলাম গ্রামবাসীদর জন্য ভালো একটি কাজ করছেন, যা এলাকার সব মানুষের মানবিক কাজে আসবে। এলাকার প্রত্যেক বিত্ত্ববানকে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন এ চিকিৎসক।
আমঝুপী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালীন কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে খুব কষ্টের মধ্যে পড়েছে তার পরিবার। আমিনুল ইসলাম দূর থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করে মহৎ কাজটি করছেন, তা অবশ্যই ভালো কাজ। প্রতিটি গ্রামে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স থাকলে মানুষের আর কষ্ট থাকবে না।
এনএ