বৃষ্টি থামলেও নামেনি পানি, জনদুর্ভোগ

বৃষ্টি থামলেও লোকালয় থেকে পানি না নামার কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বাগেরহাটের লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বৃষ্টির পানিতে মাছ ও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চারদিন ধরে পানির তলে রয়েছে আমন ধানের বীজতলা ও সবজিখেত। ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় আমনের শঙ্কা করছেন চাষিরা। ভেসে গেছে বিশ হাজারের অধিক পুকুর-ঘের। বসতঘর ও রান্না ঘরে পানি ওঠায় অনাহারে দিন কেটেছে অনেক পরিবারের।
এই অবস্থায় পানিবন্দি মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টির পানি নামতে শুরু করলেও বিভিন্ন উপজেলার ৮৩ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অন্তত পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের।
জেলায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে শরণখোলা উপজেলার। এখনও এই উপজেলায় ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ি-মৌরাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে পানি ওঠে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা। উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সবজিখেতগুলো রয়েছে পানির নিচে।
শরণখোলা উপজেলার পূর্বখাদা গ্রামের মমতাজ বেগম বলেন, চারদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। পানিতে বসতঘর, রান্নাঘর ও পায়খানা সব একাকার হয়ে গেছে। হাঁস-মুরগি, গরু— সব রাস্তায় রাখতে হচ্ছে অনাহারে। নিজেরাই খেতে পারি না, আর গবাদিপশুকে কী খাওয়াব।?
একই গ্রামের মুজিবুর শিকদার বলেন, পানিতে এমন অবস্থা যে ঘরে থাকারও কোন কায়দা নেই। এভাবে আর কয়েকদিন থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। শুধু এই বৃষ্টি হয়, প্রতি বছর তিন চারবার পানিতে ডুবতে হয় আমাদের।
শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ি মৌরাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, তিনদিন ধরে ঘরের ভেতরে দুই ফুট পানি। আসে পাশে আশ্রয়কেন্দ্রও নেই। পার্শ্ববর্তী এক বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া আজিজুল ইসলাম বলেন, যেকোনো দুর্যোগেই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। চাষাবাদের ওপর নির্ভর করেই আমাদের এলাকার বেশির ভাগে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। টানা বৃষ্টিতে এলাকার বেশিরভাগ পুকুর-ঘের ভেসে গেছে।
বাগেরহাট পৌরসভার বাগানবাড়ি বস্তি এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকে আমাদের বস্তির ৪৫টি পরিবার পানিবন্দি। ঘরের চারপাশে পানি, রান্না ঘরে পানি। কারও কারও ঘরের মধ্যেও পানি। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো নেই।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। তবে আমার উপজেলার চাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, শরণখোলা উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে। পানিবন্দি মানুষের পাশে আমরা রয়েছি। আমরা সাধ্যমতো মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছি।
কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপপরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও সব উপজেলার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে পারিনি। জেলায় কিছু আমনের বীজতলা, সবজিখেত, রবিশস্যসহ বিভিন্ন আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। এ জন্য শরণখোলায় ৫, মোংলায় ৪, রামপাল ১ এবং মোরেলগঞ্জে ২ টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তানজীম আহমেদ/এমএসআর