২২ বছর ধরে বাবা ও ভাইবোনদের খুঁজছেন রুবেল

সাত বছর বয়সে হারিয়ে যায় রুবেল। এখন তার বয়স ২৯ বছর। মা মারা যাওয়ার পর নিজ বাড়ি বরিশাল থেকে বাগেরহাটে খালার বাড়ি এসে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে হারিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রুবেল এখন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা। বসবাস করছেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। ২২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া রুবেল এখন বাবা ও ভাই-বোনদের খুঁজছেন।
রুবেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার বাড়ি বরিশালে। বাবার নাম খালেক। মায়ের নাম ছিল শেফালী। দুই ভাই ও দুই বোন আমরা। বড় ভাইয়ের নাম শিপন, মেঝো বোন খাদিজা, তারপর আমি শিপন ও ছোট বোন মুক্তা।
আমার বয়স যখন ৬ বছর তখন মায়ের কান দিয়ে রক্ত বের হতো এটুকু মনে আছে। এই অসুস্থতার কারণে মা মারা যায়। বাবা ছিলেন গরিব মানুষ। মা মারা যাওয়ার পর আমার খালা আমাকে বড় করার জন্য বাগেরহাটে তাদের বাড়ি নিয়ে আসেন। খালুর নাম সম্ভবত হোসেন গাজী। খালু বাগেরহাট মাছ বাজারে ইলিশ মাছের ব্যবসা করতেন।
রুবেল হোসেন বলেন, খালুর অভাবের তাগিদে আমাকে পেটে ভাতে একটা বাড়িতে রেখে দেয়। সেখানে ১০-১৫ দিন থাকার পর আমার খালা-খালুকে দেখার জন্য মনটা খারাপ হয়ে যায়। তখন আমি সেই বাড়ি থেকে হাঁটতে হাঁটতে খালুর বাড়ি এসে দেখি ঘরে তালা লাগানো। তখন মনে হলো, খালা-খালু আমাকে রেখে চলে গেল। এরপর মন খারাপ করে বাগেরহাট লঞ্চঘাটে গিয়ে বরিশালের লঞ্চে উঠি। তারপর কোথায় গিয়ে নেমেছি আমার মনে নেই। তখন আমার গায়ে লাল পলেস্টারের একটা জামা ছিল। সেই জামাটা আজও আমি যত্নে রেখেছি।
সাতক্ষীরার আশাশুনি পৌঁছানোর ঘটনা জানিয়ে রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এখানকার বড় ভাই শাহিনুর রহমান বালুর ব্যবসা করতেন। আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ফিরে বেড়ানোর সময় তার সঙ্গে দেখা হয়। তখন হুলোরহাট থেকে শাহিনুর ভাই আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। তারপর থেকেই এখানে রয়েছি। আট বছর আগে থেকে আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম হোসেনের বরফ ফ্যাক্টরিতে কাজ করছি। তার আন্ডারে রয়েছি। তিনিই এখন আমার সবকিছু দেখাশুনা করেন।
বর্তমান অবস্থা জানিয়ে নিখোঁজ রুবেল বলেন, ২০১৪ সালে আমি বিয়ে করেছি। পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে আমার। নাম রত্না। বাবাসহ ভাই-বোনকে খোঁজার জন্য কোনোদিন বাগেরহাট বা বরিশালে যেতে পারিনি। খুঁজতে গেলে তো টাকা লাগবে। আমার সেই টাকা নেই তাই চেষ্টাও করিনি। এখন তাদের কথা খুব মনে পড়ে। আমি একটু তাদের দেখতে চাই, কথা বলতে চাই, বাবা-ভাই বোনেরা এখন কেমন আছে। আপনারা একটু চেষ্টা করেন, দেখেন খুঁজে বের করতে পারেন কীনা।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুবেল ছেলেটি খুব ভালো। হারিয়ে গিয়ে আমার এলাকায় এসেছে ২১-২২ বছর আগে। আমার তত্ত্বাবধানে রয়েছে গত ৮ বছর। আমার বরফ ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দিয়েছি। এখন সেই ঘরে স্ত্রী ও শিশু মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছে সে।
তিনি বলেন, ছেলেটির অন্যকোনো কষ্ট নেই। তবে পরিবারের সদস্যদের জন্য মনে অনেক কষ্ট রয়েছে। একটা মানুষ নিখোঁজ রয়েছে এতগুলো বছর, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই মন যে কারো খারাপ হওয়ারই কথা। আমি সকলের কাছে আহ্বান জানাবো যদি কেউ ছেলেটির দেওয়া বর্ণনায় চিনতে পারেন তবে যেন তার পরিবারকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেন। রুবেলের বাড়ি বরিশাল এতটুকু বলতে পারে। বাগেরহাটে খালার বাড়ি থেকে হারিয়ে যায় সে। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজে পড়াশোনা করতো সে।
আকরামুল ইসলাম/এমএএস