ভোলা হাসপাতালে চরম বিশৃঙ্খলা হাতাহাতি ভাঙচুর

ভোলায় করোনার টিকা দিতে গিয়ে চরম হয়রানি আর লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে। কেন্দ্রে কোনো শৃঙ্খলা না থাকায় হাতাহাতির ঘটনা ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে টিকাপ্রত্যাশীদের। দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতাল স্টাফ ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের দালালদের বিরুদ্ধে। এতে চরম ক্ষোভ রেডক্রিসেন্ট কর্মীদের মাঝে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার (৮ আগস্ট) সকাল থেকেই ভোলার সদর হাসপাতালমুখী টিকাপ্রত্যাশীদের জনস্রোত। হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয়েছে টিকা দেওয়ার জন্য। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড-ক্রিসেন্ট সদস্যদের।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দু-একজন সদস্য থাকলেও হাজার মানুষকে সামলাতে ব্যর্থ হতে হয়েছে তাদের। হাসপাতালে আসা টিকা গ্রহণকারীদের চাপে দরজা ভেঙে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা দিতে না পেরে অনেকই বাড়ি ফিরে যান। এর মধ্যে বহিরাগতরা এসে বিভিন্ন স্থানে ঝামেলা বাধিয়ে দেয়।
এদিকে বেসরকারি একটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের একজনকে ধরে ফেলেন পুলিশের এক সদস্য। দায়িত্বরত ওই সদস্য বলেন, তিনি যখন শৃঙ্খলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন হাসপাতালের পাশের একজন তার কাজে বাধা প্রদান এবং ধাক্কা দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে তাকে সেখান থেকে ধরে বাইরে আনা হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়িয়ে নেন।
এটাই শেষ নয়, একাধিক নারী-পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, একই স্থানে নারী-পুরুষদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। নারীদের জন্য নেই পর্দার ব্যবস্থা। এটা কোনো সভ্য কাজ হতে পারে না। আবার ভিড় ঠেলে নারীদের পক্ষে গিয়ে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেক নারী ও বৃদ্ধকে দেখা গেছে টিকা না দিয়ে চলে যেতে।
ইলিশার জাঙ্গালিয়া থেকে আসা মো. আবুল খায়ের তার স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে টিকা দিতে আসেন। তবে ভিড় না সামলাতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি চলে যান। এ ছাড়া অনেকেই বলেন, তাদের দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় টিকা দিয়েই বের করে দেওয়া হয়েছে। কারও আবার ছিঁড়ে গেছে জামা। নারী-পুরুষ একই স্থানে হওয়ায় এবং একটি গেট ব্যবহার করায় সমস্যা চরমে পৌঁছে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবায় কাজ করতে আসা রেডক্রিসেন্ট সদস্য আরিফুর রহমান মীমকে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে ভোলা সদর হাসপাতালের স্টাফ মো. আলমের বিরুদ্ধ।
ভুক্তভোগীরা কয়েকজন জানান, আলম ১০ জনকে নিয়ে জোর করে টিকা দেওয়ার স্থানে ঢুকতে চাইলে দায়িত্বরত রেডক্রিসেন্ট সদস্য মীম তাকে বাধা দেন। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে তাকে লাঞ্ছিত করেন আলম। এসব ঘটনায় চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দায়িত্বে থাকা রেডক্রিসেন্টের অন্য সদস্যদের মাঝে।

রেডক্রিসন্ট সোসাইটির ভোলা জেলার যুব প্রধান আদিল হোসেন তপু বলেন, বিষয়টি ভোলার সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের আরএমওকে জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান বলেন, টিকা যা আমাদের কাছে আছে, তাতে আরও তিন-চার দিন চলবে। তাই দ্রুত টিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। টিকা দিতে সমস্যা ও বিশৃঙ্খলার কথা শিকার করে তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা টিকা প্রদান ও স্যাম্পল কালেকশন স্থান দুটি আলাদা করব। দ্রুত স্যাম্পল কলেকশনের স্থানটি সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হবে।
এনএ