বাগেরহাটে সবজির অধিক ফলন, ন্যায্যমূল্যবঞ্চিত কৃষক

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সবজি উৎপাদনকারী জেলা বাগেরহাট। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কৃষি খামারসহ মৎস্য ঘেরের পাড়ে নানা প্রকার গাছ লাগিয়ে সবজি উৎপাদন করেন কৃষকরা। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে সবজির বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে।
ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে না পেরে হতাশায়ও পড়েছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, লকডাউন শিথিল হওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম।
বুধবার (১১ আগস্ট) জেলার বিভিন্ন সবজিক্ষেত এবং হাট ঘুরে দেখা যায়, শসা, করলা, লাউ, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা প্রকার সবজির ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। ভোর থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ক্ষেত থেকে তুলে ঝুড়ি ও বস্তায় করে স্থানীয় সাপ্তাহিক হাটে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ফড়িয়াদের মাধ্যমে এই সবজি যায় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এই মৌসুমে প্রতি কেজি সবজি ১০ থেকে ১৫ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার সদুল্লাহপুর গ্রামের চাষি শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনটি ঘেরে গত বছর সবজির চাষ করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করেছি। আর এবার লাভ তো দূরে থাক, ৫০ হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করতে পারিনি।
ইব্রাহীম নামের অপর এক কৃষক বলেন, ঘেরের পাড়ে করলা, শসা, মিষ্টিকুমড়া চাষ করি। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সবজি বিক্রি করে খরচের টাকা উঠাতে পারছি না। বর্তমানে আমরা হতাশার মধ্যে রয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনে সবজি চাষ করার উপায় থাকবে না।

খানপুর এলাকার গাউস মল্লিক ১০ বিঘা জমিতে বর্ষাকালীন বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, একদিকে অতিবৃষ্টির কারণে নিচু এলাকার গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে, অন্যদিকে উৎপাদিত সবজি কম দামে বিক্রি হওয়ায় পুঁজি উঠবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এ অবস্থায় কৃষি উপকরণের দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
লকডাউন শিথিল হওয়ায় বুধবার সদর উপজেলার পোলের হাট সাপ্তাহিক সবজির হাটে প্রতি কেজি সবজির দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাটের ইজারাদার মনির হোসেন।
তিনি বলেন, লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন হাটে আগের তুলনায় ৫ থেকে ৭ টাকা কেজিতে বেড়ে শসা ১৫ থেকে ১৬ টাকা, করলা ২৩ থেকে ২৪, ঢ্যাঁড়স ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ ২০ থেকে ৩০ টাকা, চালকুমড়া ২০ থেকে ২৫ ও মিষ্টিকুমড়ার মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদি এভাবে দাম বাড়ে, তবে কৃষক-ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হবে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে। জেলায় এবার ৬ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। লকডাউনের কারণে এখন দাম কিছুটা কম পেলেও সামনের দিনগুলোতে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তানজীম আহমেদ/এনএ