নীলসাগরে পরিযায়ী পাখির কলতান

পরিযায়ী পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রম আর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে মনোমুগ্ধকর উত্তরের একমাত্র নৈসর্গিক বিনোদন কেন্দ্র নীলফামারীর নীলসাগর দিঘি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর জলকেলিতে নান্দনিক এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসেন এখানে। গাছ-গাছালির শীতল ছায়া ঘেরা দৃশ্যপট পাখিপ্রেমীদের কাছে টেনে নেয় পরম আতিথেয়তায়। মনোমুগ্ধকর এ পরিবেশ ক্লান্তি দূর করে ভ্রমণপিপাসুদের।
নীলফামারী জেলা সদর থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে নীলসাগরের অবস্থান। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে শেষ নভেম্বর থেকে সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রবণ এলাকা থেকে ছুটে আসে সারালি, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। প্রায় ৩ মাস অবস্থান করার পরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চলে যাওয়া শুরু করে নিজ ঠিকানায়।
নীলসাগর দিঘির ৩৩ একর নীলাভ জলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণে চোখ জুড়ে যায় দর্শনার্থীদের। পাখি ছাড়াও আছে বিনোদনের নানা উপকরণ। তবে ভাঙা সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে আসা বখাটেদের উৎপাতে বিপাকে নারী দর্শনার্থীরা।
পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর থেকে নীলসাগর দিঘিতে এসেছেন নুর ইসলাম। তিনি বলেন, নীলসাগরে বেড়াতে এসে আমাদের অনেক ভালো লাগেছে। তবে এখানে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাই না। ভালো কিছু খেতে গেলেই বাহিরে যেতে হয়। আশা করি সরকারি-বেসরকারিভাবে রেস্টুরেন্ট হলে আমরা দীর্ঘ সময় এখানে অবস্থান করতে পারব।
রংপুর থেকে নীলসাগর দিঘি দেখতে এসেছেন এক তরুণী। তিনি জানান, নীলসাগরে পরিযায়ী পাখি দেখে খুব ভালো লাগছে। এখানে বাচ্চাদের জন্য রাইড বাড়োনো দরকার। সেই সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, বসার বেঞ্চ তৈরি করলে ভালো হয়।
স্থানীয় যুবক আল আমিন বলেন, এই দিঘিতে প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার পরিযায়ী পাখি আছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে লোকজন আসে। বিভিন্ন যায়গায় সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার কারণে স্থানীয়রা যেকোনো দিক দিয়ে প্রবেশ করে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলে এর নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেত।
নীলসাগর দিঘির পরিবেশ-প্রতিবেশ ঠিক রেখে আরও দৃষ্টিনন্দন করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। শিগগির স্থায়ীভাবে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা হবে এই দিঘি। নিরাপদ সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বিনোদন আর পাখিপ্রেমীদের চাহিদা অনুযায়ী সব সমস্যা দ্রুত সমাধানে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
হাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, নীলফামারী
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক বৈদিক রাজা বিরাট এই দিঘি খনন করেন এবং তা বিরাটদিঘি হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে বিন্নাদিঘি নামেও পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর নীলসাগর নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এবং বর্তমানে এখানে সংস্কার করে ভ্রমণপিপাসুদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে নীলসাগরে।
এমএসআর