পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচিরে মুখর করতোয়া

শীতের হাওয়া বইতে না বইতেই আহার ও বাসস্থানের সন্ধানে হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের কিচিরমিচির ও উড়ে চলা যেন মুখর করে তুলেছে দর্শনার্থীদের। এমনই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির দেখা মিলছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামঘেঁষা করতোয়া নদীতে। বর্তমানে এখানে পাখির সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার হবে বলে স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের ধারণা।
পরিযায়ী পাখির আগমনকে উপহার হিসেবে নিয়েছেন স্থানীয়রা। কোনো শিকারিকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেবেন না বলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে তারাও পাখি শিকার করবেন না। সবাই মিলে দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছেন
প্রতিদিন সকাল-বিকেল দর্শনার্থীরা আসেন পরিযায়ী পাখির কলতান দেখতে। নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা, তাদের কলকাকলিতে সৌন্দর্যঘেরা দৃশ্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের আনাগোনা যেন নিত্যসঙ্গী। অনেকে সেই মুহূর্তগুলোকে রাখছেন ক্যামেরাবন্দী করে।
এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আগমনকে উপহার হিসেবে নিয়েছেন স্থানীয়রা। কোনো শিকারিকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেবেন না বলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে তারাও পাখি শিকার করবেন না। সবাই মিলে দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ও পরামর্শও চেয়েছেন তারা।
শাহজাদপুর থেকে পরিযায়ী পাখি দেখতে আসা মাতুয়ারা ইসলাম বলেন, এ বছর করতোয়া নদীতে অনেক পরিযায়ী পাখি এসেছে। এদের দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। প্রতিবছরই এই পরিযায়ী পাখি দেখতে আসি।
পরিযায়ী পাখি শীতকালের সৌন্দর্য। এদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এই পাখিগুলো চলে যায়। পরিযায়ী পাখি আমাদের ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে জীবন বাঁচাতে এসে উল্টো জীবন দিতে হয় ভিনদেশি এই পাখিদের
অধ্যাপক মর্জিনা ইসলাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, তাড়াশ কলেজ
নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, এ বছর চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি এসেছে। তবে নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে তারা জড়ো হচ্ছে করতোয়া নদীতে। এখানে গাছপালা বেশি। এ ছাড়া বিস্তীর্ণ জলাশয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে।
তাড়াশ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মর্জিনা ইসলাম বলেন, পরিযায়ী পাখি শীতকালের সৌন্দর্য। এদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এই পাখিগুলো চলে যায়। পরিযায়ী পাখি আমাদের ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে জীবন বাঁচাতে এসে উল্টো জীবন দিতে হয় ভিনদেশি এই পাখিদের।
জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সিরাজগঞ্জের দ্য বার্ড সেফটি হাউসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস বলেন, এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের কোনোভাবে বিরক্ত না করা। এ ছাড়া এই এলাকায় জনসচেতনতা বাড়াতে বিলবোর্ড, লিফলেট বিতরণ করা দরকার। আমরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও চলনবিল এলাকার পাখি রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাউল করিম বলেন, পাখি প্রকৃতির অলংকার। এ অলংকার ধ্বংস করা মানে পরিবেশ ধ্বংস করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে। জনগণকে সচেতন করা হবে, যেন কেউ পাখিদের বিরক্ত ও শিকার না করে। আমিও পাখির অভয়াশ্রম দেখতে যাব।
এনএ