দিনমজুর দম্পতিকে এক ঘরে রাখায় ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় মৌখিকভাবে তালাকের জেল ধরে হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় দিনমজুর আয়নাল হক ও জামিরন বেগম দম্পতিকে একঘরে করে রাখার ঘটনায় ফতোয়া প্রদানকারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
গত রোববার পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে দেবীগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক এম এম মাহবুব ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে গত ১১ আগস্ট পঞ্চগড় অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি আমলে নিয়ে ২২ আগস্টের মধ্যে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের সলিমনগর এলাকায় মৌখিক তালাকের জের ধরে দিনমজুর আয়নাল হক ও জামিরন বেগম দম্পতিকে সমাজপতিরা একঘরে করে রাখার ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে সার্বিক বিবেচনায় অতিরিক্ত চীফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান দ্য কোর্ট অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ১৯১(১) সি ধারায় বিষয়টি আমলে নেন।
বিষয়টি তদন্ত করে গত রোববার ওই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশের দেয়া সরেজমিন তদন্তের প্রতিবেদনে আয়নাল ও জামিরন দম্পতিকে হিল্লা বিয়েতে বাধ্য করতে প্রায় চার মাস ধরে একঘরে করে রাখার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হয় এবং আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে সমাজপতি শাহাজাহান আলী, ফতোয়া দেয়া মুফতি আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন, আমির খাঁ, শহীদ, ছোরমান আলী, জূল হক, মোস্তফা ও রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সরকারি কৌসুলি (পিপি) আমিনুর রহমান বলেন, ফতোয়া প্রদানের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও যারা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে সমাজে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের জন্য এ ধরনের পরোয়ানা দিয়ে আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যারা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে মানুষকে সমাজচ্যূত করে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছে সেই বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পরোয়ানা যুগোপযোগী বলে আমি মনে করি।
এ দিকে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সঠিক সময়ে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করে যথাসময়ে আদালতের দাখিল করেছি। তবে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাটি এখনও হাতে পাইনি। পরোয়ানা হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রনি মিয়াজী/এমএএস