ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

বগুড়ার ধুনটে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে হুমকির মুখে পড়ছে আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হবে। এতে কমতে শুরু করবে ফসলের উৎপাদন।
সরেজমিন চৌকিবাড়ী পশ্চিমপাড়ায় দেখা যায়, কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী চৌকিবাড়ী গ্রামে চার-পাঁচটি মেশিন দিয়ে ছয়-সাত ফুট গভীরভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এক জমির মাটি কাটায় অন্যদের জমি উঁচু হচ্ছে। এতে তারাও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। এমনকি বাধা দিতে গেলে মাটি ব্যবসায়ীরা হুমকি দেন। মাটি বিক্রির ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এটা জমির মালিকরা না বুঝেই ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অধিদফতর থেকে কৃষকদের সতর্ক করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি নিয়ম না মেনেই ফসলি জমিতে অনেক ইটভাটা হয়েছে। এসব ভাটার জন্য মাটি প্রয়োজন। ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির মাটি তারা নিচ্ছে। এতে ফসলি জমি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
মশিদুল হক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা
চান্দিয়া ও পাইকপাড়ার মাটি ব্যবসায়ী আহসান ও জিয়া ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ধুনটের অনেক ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এসব মাটি তারা সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বেলকুচি ও চালাপাড়ার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় পাশের জমির মালিকের ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তারা।
ধুনটের এক ইটভাটার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৩৫-৪০টি ইটভাটার কাজ চলছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিচ্ছেন।
চৌকিবাড়ী গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন, টাকা বেশি পাওয়ায় দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেছি। ওই জমিতে আগের মতো ফসল হবে কি না জানি না।
চৌকিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ওপর থেকে মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর। ইটভাটা মালিকরা লোভ দেখিয়ে এক কৃষকের জমির মাটি কিনলে অন্য কৃষকও বাধ্য হন তাদের কাছে মাটি বিক্রি করতে।
শুধু ধুনট নয়; সারাদেশে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ থেকে ১২ বছর পর কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে অবগত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, সরকারি নিয়ম না মেনেই ফসলি জমিতে অনেক ইটভাটা হয়েছে। এসব ভাটার জন্য মাটি প্রয়োজন। ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির মাটি তারা নিচ্ছে। এতে ফসলি জমি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনএ