নারায়ণগঞ্জে রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া। গত ৩১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (ক অঞ্চল) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে এই মামলার আবেদন করা হয়। আবেদনটি আমলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় আদালতের এই নির্দেশ সদর থানায় জমা দেওয়া হলেও বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত এমন কোনো নির্দেশের কপি পাননি বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বন্দর উপজেলায় নির্মাণাধীন ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুটি প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৮ লেনের আঞ্চলিক মহাসড়কটি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষা সৈনিক স্বাধীনতা পদকে ভুষিত (মরোণত্তর) একেএম সামসুজ্জোহা সড়ক এবং চাষাড়া থেকে আদমজী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রয়াত ভাষাসৈনিক বেগম নাগিনা জোহা সড়ক হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব রাখেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিষয়টি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে পেশ করা হয়। গত ২৫ মে তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উক্ত তিনটি স্থাপনাকে নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে নারায়ণগঞ্জের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেন। কিন্তু গত ৮ জুন নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা মিলনায়তন চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী আমলারা টাকা খেয়ে নারায়ণগঞ্জের রাস্তা ও স্থাপনার নামকরণ করেছেন। যে সকল মন্ত্রী আমলারা এ নামকরণ করেছেন তাদের কাছে জানতে চাই , যাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জে বা দেশে তাদের অবদান কী? খুনখারাবি লাশ ফালানো এই যোগ্যতার মধ্যে পরে কিনা? ম্যানডেড ছাড়া সরকার বলেই জনমতের তোয়াক্কা না করে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছে।’
এদিকে আদালত সূত্র জানায়, মহসিন মিয়ার মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক গত ৩১ আগস্ট নির্দেশনায় লিখেছেন, ‘আনীত অভিযোগসমূহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় আমলযোগ্য, যা সত্যতা নির্ণয়ের দাবি রাখে। এমতাবস্থায় অভিযোগসমূহ প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিক মর্মে প্রতীয়মান হলে এফআইআর হিসেবে রুজু করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া গেল’
এ ব্যপারে মামলার বাদী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া জানান, যে তিনজনের নামে শীতলক্ষ্যা সেতু ও দুটি মহাসড়কের নামকরণ করা হয়েছে তারা সবাই প্রয়াত। তাদের মধ্যে দুজন ভাষাসৈনিক, একজন স্বাধীনতাযুদ্ধের সংগঠক এবং অপরজন একাধিকবারের নির্বাচিত এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া এত বিশাল পরিধির স্থাপনা নামকরণের নেপথ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্বদিচ্ছা ছিল বলেই হয়েছে। সেখানে বিবাদী রফিউর রাব্বির এমন বক্তব্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রের বিরোধিতা ও অবমাননার শামিল।
যদিও বিষয়টি এখনও জানেন না বলে জানিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, বিষয়টি এখনও শুনিনি। মামলা হয়ে থাকলে সেটি আইনি প্রক্রিয়াতেই জবাব দেব।
অপরদিকে এ ব্যপারে সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, আমি এখনও আদালতের কোনো নির্দেশের কপি পাইনি। তবে আদালতের নির্দেশ পেলে সে অনুসারেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তবে মামলার বাদী মহসিন মিয়া দাবি করেন, গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যাতেই জরুরিভিত্তিতে আদালত থেকে নির্দেশনামাটি সদর মডেল থানায় জমা হয়েছে। যার কপিও আমার কাছে রয়েছে।
রাজু আহমেদ/আরএআর