রাজবাড়ীতে পানিবন্দি এলাকায় শুরু হয়েছে রোগব্যাধি

টানা এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রাজবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতকেরও বেশি গ্রাম। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ৬৭ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও সবজিক্ষেত। পানিবন্দি এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট ও গবাদিপশুর খাবার সংকট।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী তিনটি পয়েন্ট গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপরের রয়েছে এবং সদরের মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে পানিবন্দি হাজারো মানুষ। এতে নিম্নাঞ্চল, বিস্তার চরাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের আশপাশের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি, চর আমবাড়িয়া ও চর কাঠুরিয়ার। এ ছাড়া গোয়ালন্দের কুশাহাটা চর, বেতকার চর, দেবগ্রাম ইউনিয়নের চর বরাট, কাউলজানি গ্রাম, মুন্সিপাড়ার হাজার হাজার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি বাড়ায় নদীতীরবর্তী লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করেছে। প্রায় সব বাড়িতেই হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। ঘরবাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে যাওয়ায় অসংখ্য লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট তাদের কষ্ট বাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় নানা ধরনের রোগবালাই শুরু হয়েছে। কলেরা, আমাশয়, ডায়রিয়া, ঘা-খোসপাচড়াসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকেই।
তবে পানিবন্দি এসব মানুষ অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় তারা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের কোনো চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এতে তারা শারীরিক অসুস্থতায় ভোগা শুরু করেছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজ শেখ বলেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত রয়েছে। প্রতিদিনই পানির স্রোত ও উচ্চতা বাড়ছে। বাড়িতে ঢোকার অবস্থা নেই। বাড়ির চারিদিকে পানি থইথই করছে।
সদরের চর কাঠুরিয়ায় বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়িতে হাঁটুপানি উঠেছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপদে আছি।

চর মৌকুড়ির বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, রান্নাঘরে পানি উইঠা গেছে। উনোনে আগুন জ্বালাবার পারতিছি না। গরু-ছাগল নিয়ে অনেক ঝামেলায় আছি। সরকার আমাগেরে ১০ কেজি চাল দিছে, সামান্য এই চাল দিয়ে কি হয়?
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেবগ্রামের দেবগ্রাম, কাওয়ালজানি, বেতকা, রাখালগাছী ও উত্তর চর পাচুরিয়া এলাকার অন্তত দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রথম দফায় কিছুদিন আগে ৬০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। নতুন করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এসব পরিবারকে দেওয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় পানিবন্দী পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ৫১৫ পরিবারের মধ্যে ৬ হাজার ৭৭৫ জনকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও এক হাজার পরিবারের জন্য শুকনা খাবার এসেছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় ১৩টি ইউনিয়নের ৬৭ গ্রামের ৩০ হাজার পানিবন্দি মানুষের তালিকা পেয়েছি। তালিকা অনুযায়ী সবাইকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবার কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে যাবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম করা আছে।যারা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে, তারা তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নে আমাদের মেডিকেল টিমের কাছ থেকে সেবা নিতে পারবে ও বিনামূল্যে ওষুধ নিতে পারবে। তা ছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে।
মীর সামসুজ্জামান/এনএ