নির্মাণকাজ শেষ না হতেই পদ্মায় তলিয়ে গেল মসজিদটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামের নির্মাণাধীন মসজিদটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মসজিদটি বিলীন হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মসজিদের মুসল্লি আব্দুর রহমান।
জানা গেছে, রোববার সারাদিন গোয়ালডুবি গ্রামের প্রায় ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোয়ালডুবি গ্রামের ৩২টি বাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, আম বাগান ও বিভিন্ন গাছপালা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে পাউবোর চলমান নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের একজন ঠিকাদারের কয়েক হাজার সিসি ব্লক নদীতে তলিয়ে গেছে। আগস্ট মাসের শেষ দিকে ভাঙনের তীব্রতা কমলেও আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন মসজিদের প্রায় সবটুকুই নদীতে তলিয়ে গেছে। বাইরের কিছু অংশ ও সীমানা প্রাচীরের পিলার মাটিতে আছে। গোয়ালডুবি গ্রামে পদ্মার এমন অদ্ভূত আচরণ আগে কখনও দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক মাস আগে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তাই গ্রামের সকল পরিবারের কাছে চাঁদা তোলা হয়েছে। নদীতে পানি বাড়া সত্ত্বেও নতুন করে মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামের আধা কিলোমিটার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার কাজও শুরু করেছে। কেউ কল্পনাও করেনি নতুন মোড় নিয়ে পদ্মায় এভাবে কখনও ভাঙন হবে।
মুসল্লি আব্দুর রহমানবিলেন, গত মাসের ১৭ তারিখে সর্বশেষ ভাঙন হয়েছিল এখানে। এরপর অন্তত ১৫ দিন সময় পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামবাসীর শত অনুরোধেও পাউবো গ্রামটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেনি। হয়ত জিও ব্যাগ ফেললে মসজিদসহ আরও কয়েকটি বাড়ি রক্ষা পেত।
গোয়ালডুবি ওয়াক্তিয়া মসজিদ কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে গ্রামের সকলের সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করি। প্রথমবার হঠাৎ ভাঙন দেখে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাঙন এত দূর চলে আসবে বুঝতে পারিনি।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ইব্রাহিম আলী জানান, পদ্মার এমন অদ্ভূত আচরণে নিঃস্ব গোয়ালডুবি গ্রামের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে ভাঙনের হুমকিতে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে অনেকেই। এমনকি দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। অনেকেই সব হারিয়ে অন্যের আম বাগান, ফসলি জমিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে গোয়ালডুবিসহ হুমকির মধ্যে রয়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাখের আলী, মোড়লপাড়া, ফাটাপাড়া, চাকপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই রোববার সকাল থেকে পদ্মার চরবাগডাঙ্গা গোয়ালডুবি এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র হয়েছে। সকাল থেকে পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধানো এলাকার কিছু অংশ নদীতে চলে গেছে। এদিন গোয়ালডুবি গ্রামের কয়েকটি বাড়ি ও নির্মাণাধীন মসজিদ তলিয়ে গেছে।
জাহাঙ্গীর আলম/এসপি