ঋণ ২ লাখ টাকা, অর্ধেক ব্যাংক কর্মকর্তা পকেটে!
গ্রাহকের নামে ২ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করিয়ে এক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম সঞ্জয় কুমার ব্রহ্মচারী। তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী শাখার সাবেক ইনভেস্টিগেশন অফিসার।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নান্নু শেখ কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গা বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী নান্নু শেখ জমির কাগজপত্র জমা রেখে তার ভাবি শোভা বেগমের নামে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাশিয়ানী শাখায় ২ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করে।
ব্যাংকের ইনভেস্টিগেশন অফিসার (আইও) সঞ্জয় কুমার ব্রাহ্মচারী ঋণ পেতে নান্নু শেখকে সহায়তা করেন। ঋণ মঞ্জুরের পর সঞ্জয় কুমার ২ লাখ টাকা থেকে নিজে এক লাখ ১২ হাজার টাকা রেখে দেন। এর মধ্যে ১২ হাজার টাকা তিনি উৎকোচ হিসেবে আর এক লাখ টাকা ধার হিসেবে নিয়েছেন বলে জানান।
কিছুদিন পর নান্নু শেখ বাকি ১ লাখ টাকা চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা সঞ্জয় আজ-কাল-পরশু করে তাকে ঘোরাতে থাকেন। একেক সময় একেক কথা বলে নানা টালবাহানা করেন।
এরমধ্যে সঞ্জয় কাশিয়ানী শাখা থেকে বদলি হয়ে মুকসুদপুর শাখায় চলে যান। ভুক্তভোগী গ্রাহক নান্নু শেখ তাকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ধরেন না। এভাবে ৬ মাস কেটে যাওয়ার পর টাকা উদ্ধারে এলাকার বিভিন্ন লোকের দ্বারস্থ হন নান্নু শেখ।
বিষয়টি নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একদিন সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে সঞ্জয় টাকা ফেরত দিতে ২ মাসের সময় নেন। কিন্তু বৈঠকের পরে ২ মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো নান্নুকে হুমকি দেন সঞ্জয়। একপর্যায়ে টাকা নেওয়ার কথাই অস্বীকার করেন তিনি।
এরমধ্যেই ব্যাংকের পিয়ন আবুল কালাম একদিন নান্নু শেখকে ফোন করে বলেন, ‘ব্যাংকে আপনার এক লাখ টাকার কিস্তি জমা হয়েছে। বাকি টাকা আপনি পরিশোধ করে দিন। তাহলে ঋণ নবায়ন করে পুনরায় আপনাকে ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে।’ এ কথা শুনে তাজ্জব বনে যান নান্নু শেখ। তিনি ঋণের পুরো টাকাই এখনও হাতে পাননি, কিস্তির এক লাখ টাকা কীভাবে ব্যাংকে জমা হলো!
জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সঞ্জয়।
এ বিষয়ে সঞ্জয় কুমার ব্রাহ্মচারীর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি টাকা নিয়ে থাকলে গ্রাহক আমার বিরুদ্ধে ব্যাংকে অভিযোগ করুক। সংবাদ প্রকাশ করলে মানহানি মামলা করব।’
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরেই কর্মসংস্থান ব্যাংকের কাশিয়ানী শাখা ব্যবস্থাপকের যোগসাজশে এমন নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে আসছে। ঘুষ ও চুক্তি ছাড়া এই শাখা থেকে মেলে না কোনো ঋণ।
জানতে চাইলে কাশিয়ানী শাখা ব্যবস্থাপক মীর আবুল এহসান নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান। নান্নু শেখের ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহক আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএএস/জেএস