বিষাদ-সিন্ধুর রচয়িতার আজ ১৭৪তম জন্মদিন

করোনাভাইরাসের মহামারির পর আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদীতে ‘মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র’। সাহিত্যের এই তীর্থস্থানে আসতে শুরু করেছেন সাহিত্যপ্রেমীরা। এখানে গত বছরের ১৯ নভেম্বর কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা একাডেমি পরিচালিত একটি সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি।
ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক মীর মশাররফ হোসেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ। মীর মশাররফ হোসেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনীপাড়ায় ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ১ একর ৮৪ শতাংশ জমির ওপর ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বালিয়াকান্দির পদমদিতে মীর মশাররফ হোসেনের বাড়িতে নির্মিত হয় সম্ভাবনাময় স্মৃতিকেন্দ্রটি। রয়েছে একটি সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, বসার বেঞ্চ। বাংলা একাডেমির লাইব্রেরি ছাড়াও ভিন্ন একটি লাইব্রেরি রয়েছে স্মৃতিকেন্দ্র। একসময় জনবল-সংকট থাকলেও সেগুলো পূরণ করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে পদমদী মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে দেখা যায়, আগামী শনিবার (১৩ নভেম্বর) মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৪তম জন্মদিন উৎযাপন উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এরই ফাঁকে সুশীতল এই কেন্দ্রটিতে দর্শনাথীর ভিড় বেড়েছে। কেউ ছবি তুলছেন আবার কেউ বই পড়ছেন। লাইব্রেরি ঘুরে দেখছেন অনেক বইপ্রেমী। জীবনকালে মীর মশাররফ হোসেন লেখা বিষাদ-সিন্ধু, জমিদার দর্পণ, গড়াই ব্রিজ, বসন্ত কুমারীর মতো অংসখ্য কালজয়ী উপন্যাস পড়ছেন দর্শনার্থীরা।
কথা হয় স্মৃতিকেন্দ্রে আসা দর্শনার্থী রাজবাড়ীর জেলা তথ্য কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, দর্শনার্থী হিসেবে যদি বলতে চাই, তাহলে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে বইয়ের সুন্দর একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। ভালো লেগেছ জিনিসটা। নতুন প্রজন্ম যারা বই পড়তে আগ্রহী, তারা পরে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। মীর মশাররফ হোসেন সম্পর্কে জানার এটা একটা ভালো জায়গা। জায়গাটা খুব সুন্দর, পরিপাটি। আমার কাছেও ভালো লেগেছে।
দর্শনার্থী অনিক শিকদার বলেন, একসময় স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটি ছিল। বর্তমানে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়ায় আলো ছড়াতে শুরু করেছে স্মৃতিকেন্দ্রে। করোনাভাইরাসের পর নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে কেন্দ্রটি। তা ছাড়া বাংলা একাডেমি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে জন্যই দেখতে আসা।

আরেক দর্শনার্থী দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সাহিত্যচর্চা করার এটা একটা ভালো জায়গা। আগে এখানে দর্শনার্থীরা তেমন আসতেন না। কিন্তু বাংলা একাডেমি থেকে এখানে একটি সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি করার পর থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। স্মৃতিকেন্দ্রটি আরও আধুনিকায়ন হলে আশা করি দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মৃতিকেন্দ্রটি আধুনিকায়নে আমরা বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রটি তাদের তত্ত্বাবধানে চলে। বালিয়াকান্দির স্বার্থে কেন্দ্রটিকে পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে কাজ করা হবে।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রর দায়িত্বরত প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফয়সাল আমীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রটির উন্নয়নের ব্যাপারে বাংলা একাডেমি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখানে ব্যাপক কাজ করা দরকার। এ ব্যাপারে বড় ধরনের একটি প্রকল্প একনেকে পাঠানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি দিলেই স্মৃতিকেন্দ্র ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
এনএ