আ.লীগ নেতার ছেলে কারাগারে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধমকির অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। ওই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ ও সামাজিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কিশোরীর পরিবারকে। তাই ভয়ে কিশোরীকে অন্যত্র লুকিয়ে রেখেছে তার পরিবার।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শহরের কাউতলি এলাকার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সেলিম রেজা হাবিবের ছেলে তোফায়েল আহমেদ একই এলাকার এক কিশোরীকে (১৪) স্কুলে যাওয়া-আসার সময় উত্ত্যক্ত করতেন। বিষয়টি কিশোরীর বাবা তোফায়েলের পরিবারকে জানালে এতে সে ক্ষিপ্ত হয়। গত ১৭ আগস্ট দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তোফায়েল তার স্বজনদের সহযোগিতায় ওই কিশোরীকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় অভিযোগ দেয় কিশোরীর পরিবার। ২০ আগস্ট তোফায়েল ও তার বাবা সেলিম রেজা হাবিব, তিন ভাই জুয়েল, রাসেল ও সেন্টু, চাচি মনজু আরা বেগম এবং চাচাতো ভাই শাকিলের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন।
এ মামলায় ১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তোফায়েল ও তার স্বজনরা। ওই দিন আসামিরা অপহৃত কিশোরীকেও তাদের সঙ্গে নিয়ে যায় আদালতে। পরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় কিশোরীকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশ।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর তোফায়েল ও তার চাচাতো ভাই শাকিল এবং চাচি মনজু আরা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে কিশোরীকে অপহরণ মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। শাকিল ও মনজু আরা বেগম বর্তমানে জামিনে থাকলেও তোফায়েল কারাগারে আছেন।
এদিকে ছেলেকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম। দলীয় প্রভাবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে কিশোরীর পরিবারকে প্রতিনিয়ত মামলা তুলে আপস করার জন্য হুমকি-ধমকি এবং সামাজিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোরীর বাবা। তাদের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ছাড়া সেলিমের অন্য তিন ছেলে জুয়েল, সেন্টু ও রাসেল নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কিশোরীর স্বজনরা বাসার বাইরে বের হলেই তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ফলে তাদের ভয়ে ওই কিশোরীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন স্বজনরা।
কিশোরীর বাবা বলেন, বিভিন্নজনের মাধ্যমে মামলা তুলে নিয়ে আপস করার জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সেলিম ও তার ছেলেদের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবন। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম রেজা হাবিব বলেন, আমার ছেলে এখনো কারাগারে। এই সময়ে আপস-মীমাংসার জন্য চাপ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা বিষয়টি আইন অনুসারে আদালতে মোকাবিলা করব।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মোত্তালিব বলেন, কিশোরীর জবানবন্দি ও তদন্ত অনুযায়ী যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাদীপক্ষ জানিয়েছে তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এটা দিতেও পারে, কারণ আসামি ও বাদীপক্ষ একই এলাকায় বসবাস করেন। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজিজুল সঞ্চয়/এনএ