ধনেশ কালিম সোয়ানের বেষ্টনীতে বিমর্ষ পেলিক্যান

দুপুর ১২টা। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পার্কে থাকা বিভিন্ন প্রকার দেশি-বিদেশি প্রাণী দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। পার্কের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে ফিজেন্ট অ্যাভিয়ারির পাশে ধনেশ অ্যাভিয়ারিতে জায়গা হয়েছে দেশি কালিম, বিদেশি ব্ল্যাক সোয়ান, হোয়াইট সোয়ান, ক্রাউন ক্রেইনসহ ধনেশ পাখির।
বিশাল বেষ্টনীর পুরো অংশে পাখিদের প্রাণবন্ত বিচরণ পার্কে আসা দর্শনাথীদের বিনোদনের খোরাক জোগায়। ধনেশ, কালিম, সোয়ান ও ক্রাউন ক্রেইন পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সঙ্গীহীন বিষণ্ন মন নিয়ে একাকি জীবনযাপন করছে ইউরোপ ও আমেরিকার পাখি পেলিক্যান বা গগণবেড়।
দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণির সঙ্গে দুটি পেলিক্যান পাখি আনা হয়। ২০১৭ সালে অসুস্থ হয়ে স্ত্রী পেলিক্যানটি মারা যাওয়ায় পর একাকি জীবন পার করছে পেলিক্যানটি।
পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, সাফারি পার্কের ধনেশ অ্যাভিয়ারিতে পেলিক্যানের বসবাস। প্রায় এক একর আয়তনের এ জায়গার চারদিকে বেষ্টনী তৈরি করা। মূলত এখানেই তার দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। কখনও একাকি চুপচাপ বসে থাকা, আবার কখনও উড়ে যাওয়ার প্রাণান্তর চেষ্টা। এসবই তার সারা দিনের রুটিন। এছাড়াও সে দর্শনার্থীদের নানাভাবে কসরত দেখায়। শিশুসহ অনেকেই দেশে অপরিচিত এ পাখিকে দিখে আলাদা বিনোদনও পায়।
তিনি আরও বলেন, স্ত্রী সঙ্গী মারা যাওয়ায় পুরুষ এ পাখিকে দৈনিক দেড় কেজি করে ছোট রুই মাছ (নওলা) দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ পাখিটির তেমন কোনো অসুস্থতা দেখা যায়নি। ভিনদেশি হলেও এই পাখিটি আমাদের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবেই মিশে রয়েছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, জলের পাখি পেলিক্যান। বড় ঠোঁটের জন্য এরা বিখ্যাত। ঠোঁটের নিচে চামরার থলি থাকে, যার মধ্যে এরা খাবার জমিয়ে রাখে। মাছ এদের প্রধান খাদ্য। জলাশয়ের ধারে শিকারের সন্ধানে এদের বসার ভঙ্গি খুবই বৈচিত্রময়। এ পাখি প্রায় দেড় মিটার লম্বা। এদের পা ছোট। আঙ্গুলগুলো পরস্পরের সঙ্গে চামড়া দিয়ে জোড়া লাগানো। খাবার শিকারের সময় এরা পানিতে ছোঁ দিয়ে পানিসহ মাছ উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে মাছকে নিজের থলিতে ঢুকিয়ে পানিগুলো ছেড়ে দেয়। ভালো সাঁতারও কাটতে পারে পেলিক্যান। এ পাখি ঝাঁক তৈরি করে ভ্রমণ করে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, সঙ্গী অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় পর চার বছর ধরে একাকি রয়েছে পেলিক্যানটি। তার একজন সঙ্গী হলে প্রজননের একটি সম্ভাবনা ছিল। তবে সে উপায় এখনও তৈরি হয়নি। তবে টিকে থাকা এ পাখিটিকে কেন্দ্র করে সাফারি পার্কের পর্যটকরা ভালোই বিনোদন পাচ্ছে।
শিহাব খান/আরএআর