হেঁটে ১২ দিনে টেকনাফ থেকে বাংলাবান্ধা

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফ থেকে উত্তরের শেষ সীমানা বাংলাবান্ধা পর্যন্ত একাই ৯৫০ কিলোমিটার হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন মোহাম্মদ রাফি (২১) নামে এক শিক্ষার্থী। চলার পথে আত্মহত্যা, ধর্ষণ আর রক্তদান নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন। মাত্র এক বছরের হাইকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে টেকনাফ থেকে বাংলাবান্ধা পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে ১২ দিন। এর মধ্যে পাঁচদিনই একটানা ২৪ ঘণ্টা হেঁটেছেন তিনি।
একাকি আর সবচেয়ে কম সময়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হেঁটে পাড়ি দেয়া এটাই প্রথম এমন দাবি হাইকার রাফির। অন্য হাইকারদের যেখানে এ পথ পাড়ি দিতে লেগেছে ১৫ থেকে ১৭ দিন সেখানে দিন-রাত হেঁটে মাত্র ১২ দিনেই পৌঁছেছেন তিনি।
মোহাম্মদ রাফি ঢাকা আলিয়া মাদরাসার আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি মানবিক বিভাগে পড়েছেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে। পরিবারের সঙ্গে ঢাকার আজিমপুরে থাকেন। বাবা মো. সোলাইমান চকবাজারে ব্যাগের ব্যবসা করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখাশোনাও করেন রাফি।
মোহাম্মদ রাফি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে যাত্রা শুরু করেন গত ৯ জানুয়ারি। ওইদিন সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু করেন তিনি। আর তা শেষ হয় ১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেল ৫টায় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা পৌঁছে। কিন্তু তখন যাত্রা শেষ করেও অসুস্থতার কারণে এ যাত্রার বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারেননি রাফি।
অন্যান্য হাইকাররা যেখানে রাতের বেলা হাঁটেন না। সেখানে তিনি দিনরাত টানা ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত হেঁটেছেন। ৫ দিন হাঁটার পর পায়ে ফোসকা আর হাড়ে ব্যথা নিয়ে এগুনো অসম্ভব হয়ে ওঠে তার পক্ষে। কিন্তু হার মানতে নারাজ ছিলেন তিনি। ফোসকা পড়া পা আর ব্যাথা নিয়েও হেঁটেছেন আরও ছয়দিন।
দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হাইকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে মোহাম্মদ রাফি বলেন, আমার পায়ে ফোসকা পড়েছিল আটটা। দীর্ঘপথ চলতে হাঁটুর নিচে এবং পায়ের মাঝ খানে যে হাড়টা আছে সেখানে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছিলো। আমি ছয়দিন এই ব্যথা নিয়েই হেঁটেছি। তবে যারা হাইকিং করেন তারা রাতে কেউ হাঁটেন না। দিনে এগিয়ে রাতে বিশ্রামে থাকেন সাধারণত। কিন্তু আমি হেঁটেছি। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যে একক হাইকিং করেছি তা বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সময়ের ক্রস কান্ট্রি ছিল।
চলার পথে মানুষকে সচেতন করতে রাফির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল তিনটি। এর ব্যাখা দিয়েছেন তিনি।
‘বন্ধ হোক আত্মহত্যা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাফি বলেন, বাংলাদেশে আগে আত্মহত্যার হার যা ছিল লকডাউনে তা আরও বেড়েছে। আর র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে ১০ম স্থানে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫- ২৯ বছর বয়সী আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা বেশি। তাদের আত্মহত্যা করার কিছু কারণ যা আমার চোখে পরেছে বা আমি যে সমস্যাগুলার মুখামুখি হয়েছি সেই বিষয়গুলোতে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছি।
‘ধর্ষণ বন্ধ করা হোক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাফি বলেন, প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো জায়গায় কেউ না কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কিছু ধামাচাপা পরে যাচ্ছে আর কিছু আসছে মানুষের চোখের সামনে। তবু ঠিক মতো বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। শারীরিক চাহিদা সবারই আছে। কিন্তু যে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে কেমন ধরণের মানুষ? এটা নিয়ে আমি মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি।
‘রক্ত দিন জীবন বাঁচান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে তিনি বলেন, একটা বিষয় দেখবেন, আমরা নিজে রক্ত দিব না। কিন্তু যখন নিজের রক্তের প্রয়োজন হয় তখন ঠিকই রক্তের জন্য অন্যদের কাছে ধরনা দিই। প্রত্যাশা করি মানুষ রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাবে । কিন্তু এটা কি ঠিক? আমাদের আগে নিজে রক্ত দিয়ে পরে অন্যকে রক্তদানে উৎসাহিত করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সবার সচেতন হওয়া দরকার।
আরএআর