কুড়িগ্রামে শুকাচ্ছে ধরলা, বেকায়দায় কর্মজীবীরা

কুড়িগ্রামের ধরলা বুকে পানি নেই। কিন্তু ধরলাপারের খেটে খাওয়া মানুষের চোখে পানি ঠিকই টলটল করছে। নদ-নদীতে অসংখ্য চর জেগে ওঠায় পানিসংকটে করালস্রোতবহা ধরলাসহ এ জেলার নদ-নদীগুলো মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলাসহ ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীর এখন বেহাল।
এ অবস্থায় জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে নদীতীরবর্তী কর্মজীবী মানুষ। নদীনির্ভর কৃষক, জেলে, মাঝিদের আয়ের প্রধান উৎস বন্ধ হওয়ায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচাতে কেউ খুঁজছে অন্য কাজ, কেউবা পাড়ি জমাচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
নদী কমিশন পরিসংখ্যান করেছে, আগামী জানুয়ারি মাসের দিকে ধরলায় ড্রেজিং কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ হলে নদীতে পানি ও নাব্যতা ফিরে আসবে। নদী খননের বিল পাস হয়েছে। শুধু ধরলার জন্য ২৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে
পনির উদ্দিন আহমেদ, সাংসদ, কুড়িগ্রাম-২
এদিকে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস আর দফায় দফায় বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ ও দারিদ্র্য আরও পর্যায়ে পৌঁছেছে। একে তো নাব্যতা সংকটে নদীতে পানি নেই, মাছ নেই, এদিকে নেই বিকল্প কর্মসংস্থানও। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে একপ্রকার দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে জেলে পরিবারগুলো। ধরলায় স্থায়ী নদী শাসনব্যবস্থা না থাকায় নদীর গভীরতা হ্রাসের কারণে নৌপথে নৌকা চলাচলে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সময়মতো পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন হওয়ায় ঘাটের মাঝি, কুলি, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম সদর পাঁচগাছী ইউনিয়ের কদমতলা চরের নাবানু মাঝি বলেন, মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চলে। এবার নদীতে পানি না থাকায় সারা দিন যা মাছ পান, তা বিক্রি করে দিনের খাবারও জোটে না। কোনো বেলা খান তো কোনো বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতাও পাননি বলে জানান তিনি।
পাউবো নদী ড্রেজিং করতে চেয়েছিল। তার আগেই বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এ কারণেই পাউবো ড্রেজিং করছে না। তবে পাউবোর অন্যান্য কাজ চলমান আছে
মাহামুদ হাসান, উপনির্বাহী প্রকৌশলী, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড
ধরলাপারের বাসিন্দা বুলু মাঝি জানান, তারা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। এখন ধরলায় পানি নেই, তাই মাছও নেই। নদীতে মাছ না থাকায় এখন সংসার চালাতে পারছেন না। খুব বেকায়দায় আছেন। কীভাবে সংসার চলবে, বুঝতে পারছেন না।
জেলে মিলন বলেন, যদি সরকার ধরলা নদী ড্রেজিং করত, তাহলে সব সময় পানি থাকত। আর পানি থাকলে মাছও থাকত। তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। প্রতিদিন মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপনির্বাহী প্রকৌশলী মাহামুদ হাসান জানান, পাউবো নদী ড্রেজিং করতে চেয়েছিল। তার আগেই বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এ কারণেই পাউবো ড্রেজিং করছে না। তবে পাউবোর অন্যান্য কাজ চলমান আছে।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালি পদ রায় জানান, নদীতীরবর্তী জেলে পরিবারগুলো খুব কষ্টে আছে। এটা সত্যি পানি না থাকলে মাছ থাকবে কী করে। সরকার যদি তাদের জন্য বিশেষ ভিজিএফের ব্যবস্থা করত, তাহলে তারা অনেক উপকৃত হতেন। তাদের জন্য আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে চেষ্টা চালাচ্ছি যেন তারা কোনো প্রণোদনা পায়।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাংসদ পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী কমিশন পরিসংখ্যান করেছে, আগামী জানুয়ারি মাসের দিকে ধরলায় ড্রেজিং কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ হলে নদীতে পানি ও নাব্যতা ফিরে আসবে। নদী খননের বিল পাস হয়েছে। শুধু ধরলার জন্য ২৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে।
এনএ