কেউ ভর্তি বাতিল করলেই ভর্তি হতে পারবেন নিপুণ

টেকনিক্যাল কমিটির ভুলে ও স্বল্প সময়ের ফাঁদে পড়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারেননি নিপুণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাত্র ১৬ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ায় মেধাতালিকার শীর্ষে থেকেও তাকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। তবে ভর্তি হতে পারবেন, এমন আশায় এখনো ক্যাম্পাসে ঘুরছেন নিপুণ।
নিপুণের অভিযোগ, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্ট বা ভর্তির বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীর মোবাইলে। কিন্তু যবিপ্রবি কোনো মেসেজ বা কল দেয়নি। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রশাসনের কমপক্ষে এক দিন সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নিপুণের ভর্তির সুযোগ এখনো রয়েছে। কেউ ভর্তি বাতিল করলেই তিনি ভর্তি হতে পারবেন। সে জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
জানা যায়, রোববার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে যবিপ্রবির স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই দিন বিকেল ৫টায় ভর্তির তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে উপস্থিত হতে বলা হয় নিপুণকে।
কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ভর্তি হতে কম সময় এবং নিপুণের বাড়ি থেকে যবিপ্রবির দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের পরে পৌঁছান তিনি। তাই পথের দূরত্বের কারণে সময়মতো আসতে পারেননি তিনি। তাই তার ভর্তি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা ১৭তম মেধাতালিকায় থাকা নিপুণের পরিবর্তে মেধাতালিকার ১৯তম শিক্ষার্থী বগুড়ার বায়েজিদ মল্লিককে ভর্তি নিয়েছে।
নিপুণ নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষ্মীচাপ এলাকার হতদরিদ্র প্রেমানন্দ বিশ্বাসের ছেলে। তার বাবা পেশায় একজন নরসুন্দর। নিপুণ ভর্তি হতে না পেরে হতাশায় তার মা-বাবার কাছে ফিরতে পারছেন না। হতাশাগ্রস্ত নিপুণ ভর্তিবঞ্চিত হয়ে এখনো ক্যাম্পাসে ঘুরছেন ভর্তির আশায়।
মঙ্গলবারও (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় নিপুণকে। তখনো চোখ তার ছলছল করছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
এ সময় নীলফামারী থেকে আসা সালাম নামে তার এক সহপাঠী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে বারবার অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আর সময় দিতে রাজি নয়। ভর্তির জন্য কমপক্ষে এক দিন সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন এত তড়িঘড়ি করছে, তারা বুঝতে পারছেন না।

যবিপ্রবির স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, সোমবার সকালে মোবাইলে নিপুণের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন নিপুণ তার সমস্যার কথা বললে আমি বিভাগের ডিন স্যারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলি। নিপুণ ১২টা ৮ মিনিটে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলে তাকে নিয়ে বিভাগে নিয়ে যাওয়ার আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষ মেরিট লিস্টে ৩ নম্বরে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে নেয়।
যবিপ্রবি প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে নিপুণ ভর্তি হতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রোববার বিকেলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার পরের দিন সকাল ১০টায় কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারে? তারপর ওই শিক্ষার্থীর বাসা নীলফামারী। প্রশাসনের অন্তত এটা বোঝা উচিত ছিল।
ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বলেন, নিপুণ অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে। তার সঙ্গে কথা বলে শুনেছি, বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে-ঋণে টাকা নিয়ে সে ভর্তি হতে এসেছে। যবিপ্রবি প্রশাসন যথেষ্ট ছাত্রবান্ধব। তার দিকে বিবেচনা করে স্যাররা যদি একটু সদয় হন, তার স্বপ্ন পূরণ হবে।
নিপুণের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে আমাকে মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েটিং লিস্টে থাকায় আমি তাদের মেসেজ পেয়েছি, কিন্তু এখানকার প্রশাসন কোনো মেসেজ দেয়নি। আমাকে যদি আগে থেকে মেসেজ দেওয়া হতো অথবা নোটিশের পরের দিনই সময় না দিয়ে একটা দিন পরে দেওয়া হতো, তাহলে আমি সঠিক সময়ে এসে ভর্তি হতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে সুদে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করে এনেছি ভর্তি হওয়ার জন্য। আমি এখানে এসে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি আমার পরিবারকে কী জবাব দেব? এতগুলো টাকা এখন আমরা কীভাবে শোধ করব? আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শেষ! আমার আর পড়াশুনা হবেই না!
যবিপ্রবি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি কমিটির টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ গালিব বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় ম্যাসেজ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থীকে জানানোর জন্য ওয়েবসাইটে নোটিশ দেওয়া হয়, কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে মেসেজ প্রদান করি। অনেক সময় নানা কারণে মেসেজ পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। সময় অনুযায়ী না আসতে পারা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। নীলফামারী থেকে আসা ওই শিক্ষার্থী কোনো সিট খালি হলে ভর্তি হতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
জাহিদ হাসান/এনএ