বরিশালে বেড়াতে আসা ৯ বছরের শিশুকে গলা কেটে হত্যা

বরিশালে ইয়াসিন নামে ৯ বছরের এক শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর রুপাতলী রেডিও সেন্টারের পেছনে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ওপর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
ইয়াসিন দাদির সঙ্গে পাঁচ দিন আগে বরিশালে বাবার খালা আলেয়া বেগমের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
নিহত ইয়াসিনের বাড়ি বরগুনার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামে। তার বাবা সিএনজিচালক ছগির ঢাকার মহাখালীতে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করেন এবং সেখানে সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে শিশুটি তার দাদি শিরীন বেগমের সঙ্গে বরগুনা সদরের বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামে বসবাস করত।
দাদি শিরীন বেগম জানান, ঢাকা থেকে সোমবার বরিশালে আত্মীয়ের বাড়িতে আসেন তারা। ওই দিন থেকে তিনি নাতিকে নিয়ে বরিশাল নগরের রুপাতলীর রজ্জব আলী খান জামে মসজিদ সংলগ্ন বোন আলেয়া বেগমের বাসায় ছিলেন।
তিনি জানান, শুক্রবার সকালে নাতি ইয়াসিনকে বোন আলেয়ার বাসায় রেখে কাজে যান এবং দুপুরের মধ্যে ফিরে আসেন। এসে নাতিকে বাসায় না দেখে কোথায় গেছে জানতে চাইলে বোন জানান- বেলা ১১টার দিকে বাইরে খেলতে গেছে। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ না পেয়ে ছেলেকে বিষয়টি জানান। রাতে ইয়াসিনের খোঁজে মাইকিং করা হয়। ছেলে ও তার বর্তমান বউ আজ শনিবার সকালে বরিশালে এসে পৌঁছান।
এরপর একজন জানান বসুন্ধরা হাউজিংয়ের মধ্যে রেডিও সেন্টারের দেয়াল সংলগ্ন পরিত্যাক্ত জমিতে এক শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। পরে সেখানে ইয়াসিনের গলাকাটা মরদেহ পরে থাকতে দেখেন তারা।
ইয়াসিনের বাবা ছগির জানান, তার প্রথম সংসারে এক মেয়ে ও ছেলে সন্তান রয়েছে। যার মধ্যে এই ছেলে ছোট। তার বয়স যখন ৪-৫ তখন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর ছেলে ও মেয়ে তার দাদির কাছে থেকে বড় হচ্ছিল। বছর খানেক আগে মনোয়ারা নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। যার আগের সংসারে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে সন্তানদের নিয়ে কোনো ধরনের বিরোধ ছিলে না তাদের।
ছগিরের বর্তমান স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, ওদের আমি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম। এ হত্যাকাণ্ড কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই।
এদিকে ছগিরের খালাতো ভাই আলামিন জানান, তিনি ৭ মাস আগে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর জাকির সর্দার ও তাদের পরিবার কোনো খোঁজ নেয়নি তার। বরং নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।
তার দাবি- শ্বশুর জাকির সর্দার ও তার ছেলে ইমরান এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, শিশুটিকে যেভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে তা দুঃখজনক ও লোমহর্ষক। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, সকাল ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেতে পাই একটি শিশুর গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। রুপাতলী রেডিও সেন্টারের পেছনে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ওপর শিশুটিকে রাতের আঁধারে কেউ জবাই করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড এটা নিশ্চিত। তবে বিস্তারিত তদন্তের পরই বলা যাবে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির দাদির বোন আলেয়া, তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ও ছেলে আলামিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর