পড়ে আছে ২৬ লাখ টাকার সেতু
নির্মাণের পর থেকেই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের খুরাইখালী খালের ওপর নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি না থাকায় তা ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকাবাসী। এতে দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, হাওর উপজেলা মদনের ফতেপুর ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের যাতায়াত সহজ করতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি ভরাট না করায় ৮ বছর ধরে সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। আর এ কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফতেপুর ও তিয়শ্রী ইনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৬ লাখ ২ হাজার ৩৬ টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর-বারেউড়া সড়কের খুরাইখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকে দুই পাশের অ্যাপ্রোচের মাটি না থাকলেও তাতে দৃষ্টি পড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর-বারেউড়া সড়কটি তিয়শ্রী ও ফতেপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের সংযোগ সড়ক। দুই কিলোমিটার সড়ক প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সর্ম্পক গড়ে তুলেছে। এ সড়কপথে চলাচলের সুবিধার্থে খুরাইখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি না থাকায় সেতু নির্মাণ হলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না স্থানীয়রা। এ অবস্থায় নির্মাণের পর থেকেই সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
এমন অবস্থায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে সেতুর পাশে থাকা ফসল রক্ষা বাঁধের স্লুইচ গেট দিয়ে যাতায়াত করছেন। স্লুইচ গেটেরর ওপর দিয়ে যান চলাচল করায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার কৃষকরা।
স্থানীয় দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, খুরাইখালী খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ হলেও সেটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ ব্রিজ থাকলেও দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি নেই। অথচ তিয়শ্রী ও ফতেপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে।
অটোরিকশাচালক কাশেম মিয়া জানান, বারেউড়া থেকে কালীবাড়ী মোড়, বালালী বাজার ও তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। সেতুর দুই পাশে মাটি না থাকায় গাড়ি নিয়ে যেতে পারি না। তাই সেতুর পাশের স্লুইচ গেট দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে মদন হয়ে তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদে যেতে ৫ কিলোমিটারের জায়গায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফখর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা দৌলতপুর-বারেউড়া সড়কটি। কিন্তু সড়কটির খুরাইখালী খালের সেতুটি অকেজো থাকায় চলাচলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুটির অ্যাপ্রোচের মাটি ভরাটের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল বলেন, খুরাইখালী সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এ বছর প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে সেতুটির অ্যাপ্রোচের মাটি ভরাট করা হবে।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ সেতুর অ্যাপ্রোচের মাটি নেই। সেতুগুলোর তালিকা তৈরি করে শিগগির মাটি ভরাট করা হবে।
জিয়াউর রহমান/এসপি