একটু সহযোগিতা পেলেই ভালো থাকবে শুঁটকিপল্লি

মাঘের সকালে আকাশে বিন্দুমাত্র রোদ নেই। এই সময়ে কচা নদীর তীর ধরে হাঁটলেই পেছনে জেঁকে বসে কুয়াশা। মাঝখানে এই কচা নদী আর দুই পাশে দুটি উপজেলা। যার একটিতে স্বল্প পরিসরে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপল্লি। দেশে শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও শুঁটকি প্রস্তুতকারকদের নেই কোনো স্থায়ী পল্লি। স্থানীয়ভাবে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করলে এখানে উৎপাদিত শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বলছিলাম পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের চিথলিয়া এলাকার শুঁটকিপল্লির কথা। স্বল্প পরিসরে গড়ে ওঠা এই শুঁটকিপল্লি, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে এই শুঁটকি উৎপাদনে আরও বেশি মুনাফা করা যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর জেলা সদরের পূর্ব পাশে কচা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পাড়েরহাট বন্দর। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে তা বিক্রির জন্য জেলেরা ছুটে আসেন এই বন্দরে, যার পাশেই জেলেদের নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি শুঁটকিপল্লি। যেখানে ১৫-২০ বছর ধরে চলে সাধারণত ছুড়ি, কোড়াল, হাইতা, মর্মা, চিতল, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, লইট্যাসহ ৩০/৩৫ প্রজাতির মাছকে শুঁটকি করার প্রতিযোগিতা।
শীতের মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে এসব প্রজাতির মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে বেশি। এখানে কার্তিক থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত এই শুঁটকি কার্যক্রম বেশি চলে। শীত থাকলেই শুঁটকির মান ভালো থাকে। বেশি গরম পড়লে শুঁটকির মান নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গরমে কেউ শুঁটকি করেন না।
বিভিন্ন প্রজাতির এই শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে। মাছ ভেদে প্রতিকেজি শুঁটকি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তাই বিষাক্ত কোনো বস্তু বা ক্যামিকেল ছাড়াই শুঁটকি তৈরি করে বিক্রির জন্য কাজ করছেন এই পল্লির শ্রমিকরা। প্রতিটি মাছ শুকাতে অন্তত পাঁচ দিন সময় লাগে। ছুরি মাছ শুকাতে ১০ দিন ও কোড়ালসহ বড় মাছ শুকাতে লাগে ১৫ দিন।
বাজারে যেভাবে চলে সে ভাবেই মাছকে কেটে বা আস্ত রেখে তৈরি করা হয়। শুঁটকি শুকিয়ে তৈরি হলেই বস্তায় ভরে পাঠানো হয় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ মাছ দেশের বাইরেও রফতানি হচ্ছে এখন।
শুঁটকি উৎপাদনকারী আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, পারেরহাট মৎস্য বন্দরের আড়ত থেকে আমরা মাছ কিনে এনে শুঁটকি পল্লীতে শুকানোর কাজ করি। মাছ কেটে লবণ দিয়ে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় শুকিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই।
স্থানীয় সওদাগর আকিছুর ব্যাপারী বলেন, আট বছর ধরে এই শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমরা এখান থেকে শুঁটকি নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। সারাবছর ৪০০-৫০০ মণ মাছ সারাদেশে সরবরাহ করে থাকি এই শুঁটকিপল্লি থেকে। ঝড়-বন্যা, বৃষ্টি-বাদলে আমাদের শুঁটকির বেশি ক্ষতি হয়। কয়েকদিন আগে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা শুধু লবণের মাধ্যমে মাছ শুঁটকি করে থাকি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশায় ৫-৬টি বেডে শুঁটকি তৈরি করা হয়। যেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। সামান্য লবণ ব্যবহার করে তৈরি এখানকার শুঁটকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করে থাকে। এখানে একটি প্রজেক্ট গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে উন্নত কলা-কৌশল ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে আরও ভালো শুঁটকি তৈরিতে তারা অবদান রাখবে। পরবর্তীতে এই শুঁটকি আমরা বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হব।
আরআই