‘সুবিধার’ জিডিপিতে মানুষের দুর্দশা যাবে না

‘ভুল-ভ্রান্ত’ জিডিপি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির নামে যে ‘সুবিধার’ জিডিপি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, তাতে আর যাই হোক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা কোনোভাবেই লাঘব হবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
শুক্রবার ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা : বরিশাল অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আয়োজনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ মত ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাক্ষরতার হার নিয়েও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্য হ্রাসের ধারা অব্যাহত না রাখতে পারার পেছনে নীতি-নির্ধারকদের অদূরদর্শিতা ও অসম বাজেট বরাদ্দকে দায়ী করেন বক্তারা।
আবুল বারকাত বলেন, জাতীয় বাজেটের কাঠামো দারিদ্র্য-বৈষম্য নিরসন, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিল্প-কৃষি-কর্মসংস্থান-মানবসম্পদ সৃষ্টি ও প্রযুক্তি বিকাশমুখী না হলে শোভন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা স্বপ্নই থেকে যাবে।
তিনি বলেন, ‘ভুল-ভ্রান্ত’ জিডিপি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির নামে যে ‘সুবিধার’ জিডিপি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, তাতে আর যা ই হোক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা কোনোভাবেই লাঘব হবে না। আর এ কারণেই জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় হলে সাধারণ মানুষের মুখ ভার হয়ে আসে, দৈনন্দিন জীবনের অঙ্ক মেলাতে গিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখে।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, দারিদ্র্য-বৈষম্য-বঞ্চনা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোকে যথামাত্রা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরই জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে। দুবৃর্ত্তায়িত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবনাসমূহ মেনে নেওয়া কঠিন হলেও বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে তা গ্রহণ না করার কোনো কারণ নেই।
বরিশাল বিভাগের নানা শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা সভায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, উপকূলীয় অবস্থান, অধিক কৃষিনির্ভরতা, শিল্প বিকাশের অভাব এবং অসম উন্নয়ন বরাদ্দের কারণে বরিশাল বিভাগ পিছিয়ে যাচ্ছে। বিপুল জন-জল-জমিসম্পদের পাশাপাশি উত্তরে পদ্মা সেতু, দক্ষিণে পায়রা সমুদ্রবন্দর, পূর্বে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পশ্চিমের মোংলা সমুদ্রবন্দর থাকা সত্ত্বেও এ বিভাগের উন্নয়ন সম্ভাবনা কাজে লাগছে না।
তারা বরিশাল বিভাগে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনা-বরিশালের চরাঞ্চলে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, পিরোজপুর-ঝালকাঠিতে কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষিপণ্য ও শস্য প্রক্রিয়া, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ শিল্প প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ, নদ-নদীর নাব্য ফেরাতে খননে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, কৃষি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চার লেন সড়ক নির্মাণ, রেললাইন স্থাপন এবং পটুয়াখালী ও বরগুনার রাখাইন উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য জাতীয় বাজেটে কার্যকর বরাদ্দ দাবি করেন।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির নেতারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক শাহ সাজেদা ও জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক ড. শামীম আহসান ও মহসিন উল ইসলাম ও পটুয়াখালীর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ ।
আরএম/আরএইচ