দেশে বিলাসবহুল বাস উৎপাদন শুরু
দেশেই তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল বাস। বিশ্বমানের এসি, নন-এসি লাক্সারি বাস উৎপাদন শুরু করেছে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ইফাদ অটোস লিমিটেড। ফলে এসব বাসের জন্য এবার থেকে আর আমদানি নির্ভর হতে হবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতিষ্ঠিত ইফাদের নিজস্ব কারখানায় বিলাসবহুল এ বাস উৎপাদন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মো. এনামুর রহমান ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুন্সী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ইফাদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ, ইফাদ অটোসের এমডি তাসকিন আহমেদ, গ্রুপ ডিরেক্টর তাসফিন আহমেদসহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা, বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের গাড়ি দেশেই উৎপাদন করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশে একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নয়ন এবং টেকসই বিকাশের লক্ষ্যে এ নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই এর খসড়া অনুমোদন করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা চূড়ান্ত করা হবে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অটোমোবাইল শিল্পোৎপাদনের কেন্দ্রে উন্নীত করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি সরকারের পাশাপাশি অটোমোবাইল শিল্প উদ্যোক্তাদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশে প্রকৃত অর্থেই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ গাড়ি সংযোজনকারী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০২০ সালকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ২০৪১ সালে উন্নত আয় ও শিল্প সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সরকার দেশে শিল্প কারখানা স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে।’

ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু জানান, বেসরকারি উদ্যোগে ইতিহাসে নবদিগন্তের সূচনা করেছে ইফাদ অটোস। এত দিন এই কারখানায় শুধু গাড়ি সংযোজন করা হতো। এখন বিলাসবহুল এসি, নন-এসি বাসের বডি তৈরি করা হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করতে বেশ সময় লাগে। এই কারখানা চালু হওয়ার ফলে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে গাড়ি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ইফতেখার আহমেদ টিপু বলেন, ‘বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে ভারি যানবাহনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ইফাদ অটোস লিমিটেড বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও দেশে শিল্পবান্ধব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই কারখানা স্থাপন করেছে।’
তিনি জানান, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে লাক্সারি এসি ও নন-এসি বাস তৈরি হবে। বছরে এক হাজারেরও বেশি গাড়ির বডি তৈরি করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই কারখানায় বিভিন্ন মডেলের এসি-নন এসি বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান সংযোজন হবে, তাই তার উৎপাদন খরচ আমদানি করা গাড়ির দামের চেয়েও কম হবে। এর সুবিধা গাড়ির মালিক ও যাত্রীরা ভোগ করবেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে তৈরি হবে নতুন গাড়ি। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে না।’
জাতীয় অর্থনীতিতে এই সংযোজন কারখানা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে জানিয়ে ইফাদ অটোসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশীয় কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার, দক্ষ কর্মী তৈরি, নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বছরে ১২ হাজার গাড়ি সংযোজনের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে ইফাদ অটোস লিমিটেডের সংযোজন কারখানা চালু হয়। কারখানাটিতে ভারতের অশোক লেল্যান্ড ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি তৈরি হচ্ছে।
এসআই/এফআর/এমএমজে