বন্ধ হচ্ছে জুবিলী ব্যাংক, চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি

দেশের সবচেয়ে পুরানো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জুবিলী ব্যাংক বন্ধ হতে যাচ্ছে। শতবর্ষী ব্যাংকটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের শেয়ার থাকাসহ নানা কারণে থমকে আছে।
সম্প্রতি ব্যাংকটির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধীরে ধীরে ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সার্কুলারের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম-কে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এতদপ্রেক্ষিতে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি বাতিল কার হলো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। কর্মকর্তার সংখ্যা সাত থেকে আটজন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন শাখা ম্যানেজার নিজেই। তার বেতন ১৮ হাজার এবং চেয়ারম্যানের বেতন ২৫ হাজার টাকা। সারা বাংলাদেশে ব্যাংকটির শাখা মাত্র একটি।
১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে কোম্পানি হিসেবে আরজেএসজিতে নিবন্ধিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ করা হয়। প্রথমে স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসা পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে মাত্র একটি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায়। পরবর্তী সময়ে স্বর্ণ বন্ধকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষিদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় ব্যাংকটিকে। এটি দেশের অতফসিলি পাঁচটি ব্যাংকের একটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভা সংক্রান্ত মামলার আদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের প্যানেল করে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। তবে তা না করে সরাসরি এমডি নিয়োগ দেওয়ায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। মামলার শুনানি শেষে আদালত অবমাননার দায়ে তাদের সাজা দেন।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে তৎকালীন চেয়ারম্যান এমবিআই মুন্সী ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামানকে একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একজন সদস্য অনুপস্থিত থাকায় তাকেও একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকের চার পরিচালককে কিছু সময় আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড এবং অপর এক নারী সদস্য অসুস্থ থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত জুবিলী ব্যাংকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, কয়েকদিন আগে আমাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমার জানা মতে, কোর্ট থেকে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর এ ধরনের একটি নির্দেশনা এসেছে আদালত থেকে।
এসআই/এমএআর/এফআর
