‘রেস্তোরাঁয় অভিযানের নামে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সংস্থাগুলো’

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা অভিযানের নামে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত ৮০০ বেশি রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং ২৩০টি সিলগাল করে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেক মালিক পালিয়ে আছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ১৯ জনের এখনো জামিন হয়নি।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান এ তথ্য জানান।
মহাসচিব বলেন, পুলিশ প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে অভিযানের নামে হয়রানি ও চাঁদাবাজি করছে। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর পুলিশের অভিযান কিছুটা কমলেও অন্যান্য সংস্থাগুলো এখন চাঁদাবাজি করছে। রেস্টুরেন্ট মালিকদের ফোন করে টাকা চাওয়া হচ্ছে, না হয় অভিযান চালানোর কথা বলা হচ্ছে। এই সুযোগে অনেকে বেনামেও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে।
হয়রানি দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানিয়ে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, সবাই চাঁদাবাজি করছে। যে যখন সুযোগ পাচ্ছে সবাই সুযোগ নিচ্ছে।
তিনি জানান, এমনিতেই সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। এখন পর্যন্ত ঢাকায় ৩০০টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নবাবী ভোজঁ রেস্তোরাঁয় সরকারের ১২টি লাইসেন্স থাকার পরও সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন বন্ধ করা হয়েছে তার কারণ দর্শানো হয়নি, এমনকি কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। রমজান মাসে ব্যবসা করার সময়। অথচ সব কর্মচারীরা বসে আছেন। সামনে ঈদ তাদের বেতন বোনাসও অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এই জুলুম চলছে রেস্তোরাঁগুলোতে।
আরও পড়ুন
ইমরান হাসান বলেন, একটি রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে বলে সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেবেন এটা কখনও সমাধান হতে পারে না। আমরাও চাই এখানে কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা সব ঠিকঠাক মত চলুক। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থা থেকে আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স আনতে গেলে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স আগে আনেন, পরিবেশে গেলে বলে আগে ফায়ারের লাইসেন্স আনেন। আমরা চাই সব সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হোক। তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত একটি সমাধানের পথ বের করুক। না হয় এই সেক্টরও ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি জানান, ডেসকো, ওয়াসাসহ সেবা সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ২২৫০ রেস্তোরাঁকে নোটিশ দিয়েছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারকে আমরা বাণিজ্যিক বিল দিয়ে আসছি।
বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ব্যবসা তুলে দেওয়ার জন্যই এই অশান্তি হচ্ছে অভিযোগ করে ইমরাহ বলেন, আগুনে কারো ঘর পুড়ে, আর সেই আগুনে কেউ আলু পোড়া দিয়ে খায়। আজকে আমাদের ঘর পুড়েছে এখন একটি গোষ্ঠী এখান থেকে ফায়দা লোটার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
তিনি বলেন, রাজউক যে অভিযান চালাচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে রেস্তোরা করা যাবে না বলে কোথাও বলা নেই। তাহলে কেন এই অভিযান। রাজউক বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা। তাদের সম্পদের খোঁজ নিলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে
যদি ব্যবসা করার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে ১২টি সংস্থার লাইসেন্স কেন প্রদান করা হলো এমন প্রশ্ন রেখে মহাসচিব বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছি, সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছি তখন তারা কোথায় ছিল? ঘটনার পর সবাই এসে আমাদের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে যদি শুরু থেকেই প্রশ্ন থাকত তাহলে তারা আমাদের আগে থেকেই আটকে দিত। মামলার কারণে আজ মালিকদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার স্বীকার করছি, আমাদের অজ্ঞতা ও ব্যর্থতা রয়েছে। আমাদের প্রায় ৯৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীরা অদক্ষ। সেজন্য আমরা বলি, আমাদের সময় দেওয়া প্রয়োজন। হুট করে সব কিছু বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে সমাধান আসবে না। আমরা চাই বিজিএমই মত একটা শক্ত সংস্থা হিসেবে রেস্তোরাঁ শিল্প গড়ে উঠবে। আমাদের টার্গেট হলো সব কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এরমধ্যে উপর্যুপরি অভিযান করে এই শিল্পকে ধ্বংস করার পায়তারা হচ্ছে। করপোরেট সেক্টরের কাছে এ শিল্পকে তুলে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি আরও বলেন, করপোরেট সেক্টরের দখলে সব কিছু। তারা চায় না ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প জেগে উঠুক। এই সেক্টরে প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এ সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে কারা ফায়দা লুটতে চায় তা সরকারকে খোঁজে বের করতে হবে। এত বড় একটি অভিযান চলছে অথচ সরকারি দল, সংসদ, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ কেউ কোনো কথা বলেনি। তারা সবাই ক্ষমতা যাওয়া ও ধরে রাখা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ চোখের সামনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কেউ কথা বলছে না।
নবাবী ভোজের মালিক ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান বলেন, সরকারের ১২টি সংস্থার লাইসেন্স নিয়ে আমরা রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছি অথচ কোনো কারণ ছাড়াই নবাবী ভোজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং কেন বন্ধ করা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা ও চিঠি দেয়নি। সরকারের সংস্থাগুলোর কাছে শুধু চিঠির জন্য দৌড়াচ্ছি করছি কিন্তু এখনও তা পাইনি।
এটা হয়রানি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো বলছে রেস্টুরে
গুলোতে লাইসেন্স নেই। আমার তো আছে তাহলে কেন বন্ধ। সবাই লাইসেন্স নিলেও হয়রানি করা হবে। তাই এ সেক্টরের সমন্বিত সমাধান বের করতে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান, নবাবী ভোজের মালিক লাবনী হাসনা চৌধুরীসহ সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনএম/আরএইচটি/এমএসএ